আর্থিক সুবিধাসহ ব্যাচভিত্তিক ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও পরবর্তী সময়ে ব্যাচভিত্তিক নিয়মিত পদোন্নতি দেওয়াসহ ডাক বিভাগের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা দুটি দাবি জানিয়েছেন।
অন্যান্য বিসিএস ক্যাডারের তুলনায় ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা বৈষম্যের শিকার দাবি করে রোববার (১৮ আগস্ট) তাদের একটি প্রতিনিধিদল প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
এতে জানানো হয়- ডাক বিভাগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ঐতিহ্যবাহী সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠান। ডাক বিভাগের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী মূল্যে জরুরি ডাক ও আর্থিক সেবা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আসছে। কিন্তু জনবল সংকট, প্রশাসনিক সংস্কারের অভাব এবং মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে এই সার্ভিসের প্রত্যেকটি কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন পদে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও বিগত ২ বছর মেয়াদকালে এই ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকেও কোন পদেই পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি।
ডাক বিভাগের মহাপরিচালক গ্রেড-১ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালক গ্রেড-২ এর একটি পদ থাকলেও পদ সৃষ্টির পর থেকে এ পদে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে না। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টমাস্টার জেনারেল/সমমান (গ্রেড-৩) এর মোট ১২টি পদের মধ্যে ৯টি পদই দীর্ঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে, যা ডাক সার্ভিসের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
যথাসময়ে ধারাবাহিক পদোন্নতি ব্যাহত হওয়ার কারণে এই ক্যাডারের ১৯৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশের ৩৯টি জেলা এবং সকল উপজেলায় এখনও ১ম শ্রেণির কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি বিধায় ৩য় শ্রেণির কর্মচারী দ্বারা এসকল ডাকঘর পরিচালিত হয়ে আসছে, যেখানে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১ম শ্রেণির একাধিক পদ রয়েছে। দেশে পূর্বের ৪টি প্রশাসনিক বিভাগের পর নতুন আরও ৪টি বিভাগ সৃষ্টি হলে অন্য সকল সরকারি দপ্তরের নতুন ৪টি বিভাগ সমূহে বিভাগীয় দপ্তর পদ সৃজনসহ তৈরি হলেও নতুন বিভাগসমূহে ডাক বিভাগের কোনো বিভাগীয় দপ্তর এখন পর্যন্ত সৃষ্টি করা হয়নি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিভিন্ন সময়ে প্রেরণ করা হলেও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সদিচ্ছার অভাবে অদ্যাবধি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ কারণে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় মনিটরিংব্যবস্থা বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে এবং জরুরি ডাক ও আর্থিক সেবাসমূহ নাগরিক চাহিদা নিরিখে গুনগত মান বজায় রেখে প্রদান করা যাচ্ছে না।
বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকে অন্যান্য বিসিএস ক্যাডারের তুলনায় পদোন্নতি ও অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (পররাষ্ট্র), বিসিএস (কৃষি), বিসিএস (সওজ), বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব), বিসিএস (গণপূর্ত), বিসিএস (আনসার) সহ অন্যান্য ক্যাডারের ৩৭তম ব্যাচ ২০১৯ সালে ৯ম গ্রেডে যোগদানের পর ফিডার পদে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছে।
অপরদিকে ডাক ক্যাডারের ৩৩তম ব্যাচ ২০১৪ সালে যোগদান করে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে (৬ষ্ঠ) পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ৯ম গ্রেডেই কর্মরত আছেন। একইভাবে, অন্যান্য ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাগণ ২০২১ সালে ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে থাকলেও ডাক ক্যাডারের একই ব্যাচের কর্মকর্তাগণ বর্তমানে ৬ষ্ঠ গ্রেডে কর্মরত আছেন। অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসে ৯ম গ্রেড থেকে ৫ম গ্রেডে পদোন্নতি পেতে যেখানে ১০ থেকে ১১ বছর সময় লাগে, বিসিএস ডাক ক্যাডারে সেই পদোন্নতি পেতে ২০ বছরের অধিক সময় লেগে যায়। এই বৈষম্য বিসিএস ডাক ক্যাডারের সকল পর্যায়ে বিরাজমান। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের কারণে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ আর্থিক ও সামাজিকভাবে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
বিসিএস (পোস্টাল) অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এইচ এম ইকবাল মাসুদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অপর দাবিটি হলো, অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মতো সব বিভাগে ডাক বিভাগের বিভাগীয় দপ্তরসহ অন্যান্য পদ সৃষ্টি করা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এখন বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে তারা নিজেদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন চান।
এসকল দাবির প্রেক্ষিতে সচিব তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভূক্ত ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিসহ অন্যান্য দাবিসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার আশ্বাস প্রদান করেন এবং যেসকল দাবিসমূহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহে প্রেরণসহ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবেন মর্মে জানান।
বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সদস্যবৃন্দ পরে উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে ডাক ক্যাডারের সুনর্দিষ্ট দাবি নিয়ে কথা বলেন। উপদেষ্টা ধৈর্য্য সহকারে বিসিএস (ডাক) ক্যাডারের সুনির্দিষ্ট দাবিসমূহ শোনেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সচিব ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে নির্দেশনা দেন।
রুমী/ঢাকা