রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে ইরান সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসারুল্লাহকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছেন, হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা নিহত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির আরও সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে হিজবুল্লাহর দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডারও আছেন।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর অবস্থান কয়েক মাস ধরেই জানতো ইসরায়েল। দেশটির তিনজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ইসরায়েলি রিপোর্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাসরুল্লাহকে হত্যার জন্য অভিযান চালাতে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়নি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অভিযানের এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় তখন লেবাননে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসরায়েলের নেতাদের আলোচনা চলছিল। এ ছাড়া এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে যান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ পড়তে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন এক টিভি উপস্থাপক। দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-মাইয়িদীনে আজ শনিবার নাসরুল্লাহর মৃত্যুসংক্রান্ত সংবাদ পড়ার সময় ওই নারী উপস্থাপক কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
দুইজন কর্মকর্তা বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে এই অভিযানে ৮০টির বেশি বোমা ফেলা হয়। এতে ছয়টি ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। শুক্রবার চালানো এ হামলায় প্রথমদিকে ইসরায়েলি বাহিনী হাসান নাসরুল্লাহর নিহতের খবর নিশ্চিত করলেও হিজবুল্লাহ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা। খবর আল জাজিরার।
হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলটির নতুন প্রধান কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হাশেম সাফিউদ্দিন দলটির নতুন প্রধান হতে যাচ্ছেন। কিন্তু কে এই হাশেম সাফিউদ্দিন?
সাফিউদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী কাউন্সিলের প্রধান। গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক বিষয় দেখভাল করা তাঁর দায়িত্ব। তিনি গোষ্ঠীটির জিহাদ কাউন্সিলেরও সদস্য। নিজেদের সামরিক অভিযানের ব্যবস্থাপনা করাই এই কাউন্সিলের কাজ।
সাফিউদ্দিন প্রয়াত নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই। নাসরুল্লাহর মতো তিনিও ধর্মীয় পণ্ডিত। তিনিও মাথায় কালো পাগড়ি পরেন।
২০১৭ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফিউদ্দিনকে সন্ত্রাসী তকমা দেয়। গত জুনে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার নিহত হওয়ার পর তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ওই কমান্ডারের দাফন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘(শত্রুদের) কান্না ও বিলাপের জন্য প্রস্তুত হও।’ সাফিউদ্দিনের বিবৃতিতে প্রায় সময় হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থানের প্রতিফলন থাকে।
বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলি দহিয়েহ এলাকায় সাম্প্রতিক এক সফরে সাফিউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমাদের ইতিহাস, আমাদের বন্দুক ও আমাদের রকেট আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।’
৪২ বছরের পুরোনো গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিভিন্ন কাউন্সিলে সাফিউদ্দিনকে একাধিক পদ পেতে সহায়তা করেছিলেন নাসরুল্লাহ। এ প্রসঙ্গে ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে গবেষণা করেছেন বিশেষজ্ঞ ফিলিপ স্মিথ। তিনি বলেন, (নাসরুল্লাহ) লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে বিভিন্ন কাউন্সিলে নানা পদ পেতে তাঁর (সাফিউদ্দিন) জন্য কাজ করছিলেন।