রাজেশ খান্নার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের  ফার্স্ট সুপারস্টার রাজেশ খান্নার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ।  ২০১২ সালের ১৮ জুলাই মুম্বাইয়ে অবস্থিত নিজ বাংলো আশীর্বাদে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  তার জন্ম ১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রাজনীতিবিদও ছিলেন। পরপর ১৫টি সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শক্তি সামন্তের আরাধনা চলচ্চিত্রে সহজাত অভিনয় করে তিনি বলিউড জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হন।  তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে – আনন্দ, কাটি পতঙ্গ, সফর, সাচা ঝুটা, রাজা রাণী, বাওয়ারর্চি, অমর প্রেম প্রমূখ।

শৈশবে তার নাম ছিল যতীন অরোরা। চুন্নি লাল খান্না এবং লীলবতী খান্না তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন ও বড় করে তোলেন। তারা রাজেশের প্রকৃত মা-বাবার আত্মীয়। রাজেশের পিতা-মাতা অবিভক্ত ভারতের অমৃতসরের গলি তিউয়ারিয়ান এলাকা থেকে অভিবাসিত হয়ে ১৯৪০ সালে ফিরে আসেন। দত্তক গ্রহণের পর তার নতুন পরিচয় হয় যতীন খান্না। তার আরেক নাম ছিল কাকা।

রাজেশ খান্না চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে তার কাকা নামের প্রথমাংশ পরিবর্তন করে হয় রাজেশ । তার বন্ধু এবং তার পত্নী তাকে কাকা নামে ডাকত।

১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে ফ্যাশন ডিজাইনার ও অভিনেত্রী অঞ্জু মাহেন্দ্রু’র সাথে পরিচিত হন। তাদের মধ্যেকার ভালবাসার সম্পর্ক ৭ বছর স্থায়ী ছিল।  অভিষেক চলচ্চিত্র ববি (১৯৭৩) মুক্তি পাবার ছয় মাস পূর্বে মার্চ, ১৯৭৩ সালে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডিম্পল কাপাডিয়াকে বিয়ে করেন রাজেশ। এ দম্পতির দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকেন যা রাজেশের মৃত্যুকাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল; কিন্তু তারা বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হননি। রাজেশের চলচ্চিত্র জীবনে ব্যস্ততা এবং ডিম্পল কাপাডিয়ার অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্রে পুণরায় অংশগ্রহণের আগ্রহই এর প্রধান কারণ।

১৯৮০-এর দশকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী টিনা মুনিমের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন রাজেশ। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে টিনা মুনিম উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র জগৎ ত্যাগ করে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান।

250px-Rajesh_Khanna's_funeral_14
১৯ জুলাই, ২০১২ সালে মুম্বইয়ে রাজেশ খান্নার শবযাত্রার দৃশ্য

রাজেশ-ডিম্পলের মধ্যেকার তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান-পার্টিতে এবং রাজেশ খান্নার নির্বাচনী প্রচারণায়ও ডিম্পলকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এমনকি জয় শিব শঙ্কর চলচ্চিত্রেও ডিম্পল কাজ করেছেন।
রাজেশ-ডিম্পলের জ্যেষ্ঠা কন্যা ইন্টারিয়র ডেকোরেটর ও সাবেক অভিনেত্রী টুইঙ্কল খান্না জনপ্রিয় অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে বিয়ে করেন। এছাড়া, কনিষ্ঠা কন্যা রিঙ্কি খান্নাও সাবেক হিন্দি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। রিঙ্কি খান্না লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংকের কর্মকর্তা সমীর সরণকে বিয়ে করে।

অনীতা আদভানী নামীয় এক নারীর সাথে ২০০৪ সাল থেকে মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করেন রাজেশ।

তিনি ১৬৩টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তন্মধ্যে ১২৮টি চলচ্চিত্রেই মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়। এছাড়াও, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

রাজেশ খান্না চৌদ্দবার মনোনয়নসহ তিনবার ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, চারবার বিএফজেএ সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান ও ২৫ বার মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৯১ সালে চলচ্চিত্র জগতে ২৫ বছর পূর্তিতে ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। এ সময়ে তিনি ১০৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন ২০০৫ সালে। ১৯৬৬ সালে আখরী খাত চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর বিরোচিত অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর একে একে অভিনয় করেন রাজ (১৯৬৭), বাহারো কি স্বপ্নে, ইত্তেফাক, আনন্দ, আরাধনার ন্যায় চলচ্চিত্রসমূহে।

১৯৭০-৭৯ সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এছাড়াও, ১৯৮০-৮৭ সাল পর্যন্ত বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের সাথে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা ছিলেন।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লী আসনে লোকসভায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন রাজেশ খান্না। তিনি উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি নতুন কোন চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণে সম্মতিজ্ঞাপন করেননি। সংসদ থেকে চলে গেলেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষে ২০১২ সালের নির্বাচনের প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালে শক্তি সামন্তের পরিচালনায় বলিউডে আরাধনা চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় ও মুক্তি পায়। এতে রাজেশ খান্নার বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। চলচ্চিত্রটি ১৯৪৬ সালে হলিউডে ‘টু ইচ হিস অউন’ শিরোনামে সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল যা পরবর্তীতে হিন্দিতে ‘আরাধনা’ নামে নতুন করে নির্মিত হয়। বছরের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে এটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করে। শর্মিলা ঠাকুরও ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন যা হলিউড চলচ্চিত্রে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অলিভিয়া দ্য হ্যাভিল্যান্ড তাঁর সেরা অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

হিন্দিতে প্রথমে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হলেও পরবর্তীতে বাংলা ভাষায়ও এটি ডাবিং করা হয়। আরাধনা চলচ্চিত্রের ব্যাপক ব্যবসায়িক সাফল্যে আরো দু’টি ভাষা – তামিল ও তেলেগু ভাষায় যথাক্রমে সিবকামিইন সেলভান (১৯৭৪) ও কন্যাবাড়ি কালাউ (১৯৭৪) নামে পুণরায় নির্মিত হয় যাতে শর্মিলা ঠাকুর বনশ্রী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

শাহ মতিন টিপু

Print Friendly

Related Posts