বিডি মেট্রোনিউজ ।। একাত্তরে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করল জাতি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ৮টার কিছু পর প্রথমে রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপরই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুসময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ দল সশস্ত্র সালাম জানায়। মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান এবং আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছে প্রথমেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। স্মৃতিসৌধে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্থানীয় সাংসদ আসলামুল হক আসলাম।
রাষ্ট্রপতি সকাল ৮টায় স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে শেখ হাসিনা, আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং আসলামুল হক তাকে স্বাগত জানান। বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবদুল হামিদ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন।
সরকারপ্রধান হিসাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাওয়ার পর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় পাতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, জাসদসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সকাল সাড়ে ৮টার পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুল দেন ১০টা ২০ মিনিটে।
বিকাল ৩ টা ৫০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এই হত্যাকণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা। পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
সেই রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।