বিডি মেট্রোনিউজ || রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের ‘প্রতীকী বিচার’ করার ঘোষণা দিয়েছে ’আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’। শুক্রবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় স্বাধীনতা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়ে গণবিচার আদালতের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “আগামী ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ১৯৫ জন পাকিস্তানি ঘাতকের প্রতীকী বিচার করা হবে। “আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি- ওইসব সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং এদেশে তাদের সহযোগীদেরও বিচার করা হবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ওই পাক সেনাদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করার অঙ্গীকার করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও পাকিস্তান সরকার তাদের বিচার করেনি।
“প্রতীকী বিচারের মাধ্যমেই আমাদের এই আন্দোলন শুরু হবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের নির্মূল করতে না পারব, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ১৯৫ সেনা সদস্যকে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি করার শর্তে ফেরত নেয় পাকিস্তান। এরপর ৪৪ বছর পার হলেও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি দেশটি।
সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পাক বাহিনীর এদেশীয় সহযোগীদের বিচার ও কয়েকজনের দণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তান ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দেখানোর পর ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনারকে ডেকে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানায় বাংলাদেশ সরকার।
এর এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে একাত্তরে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে পাকিস্তান।
এ ধরনের ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি নতুন করে ১৯৫ জন পাক সেনার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে পাক সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের বিচারে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণসংযোগ, ৩ জানুয়ারি ২০১৬ মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ এবং ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল ও কার্যকর করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক আবেদ খান বিভন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ ছাড়া সাংসদ শিরিন আখতার, মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অঞ্জন রায়, কামাল পাশা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।