নির্বাচনে কাঙ্খিত বিজয় না পেলে যা করবে বিএনপি

বিডি মেট্রোনিউজ || কাল  দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন।এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, স্বতন্ত্রভাবে জামায়াত, জাতীয় পার্টি, জেপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোটসহ আরো কয়েকটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছে প্রধান দুই দল।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই দল দু’টি একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে উভয়েই কৌশলী ভূমিকার আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মন্ত্রী, এমপিদেরসহ সরকারি দলকে বিশেষ সুবিধা, ছাড় দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকারি দলের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রশাসন ব্যবহারের অভিযোগও করা হয়।

শুরুতেই দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন যে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের দলীয় দুই শতাধিক প্রার্থী বিজয়ী হবেন। ভোটাররা বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য অধীর হয়ে আছেন। সরকারি দল সন্ত্রাস, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, কারচুপি, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেবে-প্রভৃতি সব অভিযোগ করেছেন।

অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয় হলেও তারা দেশবাসীকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নির্বাচন পূর্ববর্তী তাদের অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পারবেন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেয়ার মন-মানসিকতার পরিকল্পিত ঘাটতি এতে সুস্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত। তবে তা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন প্রকৃত অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হয় কিনা তার উপর।

নির্বাচনে কাঙ্খিত বিজয় না হলে সন্ত্রাস, কারচুপি, জালিয়াতির বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি স্থানীয়ভাবে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ সমবেশ করা হবে। ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতকদের অবহিত করবে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে নির্বাচন কমিশন। তারা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবে। কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে কয়েকদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

অপরদিকে সরকারি দলেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশলের ঘাটতি নেই। তারা ঘোষণা করেছেন, সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের প্রার্থীরা ২০০ পৌরসভায় বিজয়ী হবেন। দুই দফায় এ ধরনের প্রত্যয়ী বক্তব্য দেয়ার উদ্দেশ্য বিএনপি প্রার্থীদের পরাজয়ের পূর্ব ঘোষণা দেয়া। সাংগঠনিক রাজনৈতিক  স্বার্থে ভোটারদের প্রভাবিত করতে এ ধরণের ঘোষণা একটি দল দিতেই পারে। তবে এতটা গুরুত্বের সাথে এ ধরনের ফলাফলের আগাম ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ। যদি ভোটারদের উপর জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য ফলাফল ঘোষণা করা হতো তাহলে উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের সুযোগ থাকত না।

ক্ষমতাসীন দল থেকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতি অন্যায়, অবিচার করা এবং সংসদে প্রতিনিধি না থাকায় বিএনপিকে অধিকতর সুবিধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের প্রার্থীদের সম্ভাব্য পরাজয় সম্পর্কে ব্যাপক জনগণকে বিভ্রান্ত করার আগাম ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে পারছেন এর মাধ্যমে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ব্যাপক ভোট কারচুপি, জালিয়াতির ব্যবস্থা করাও এসবের নেপথ্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিমাতা সুলভ আচরণের অভিযোগ আনা এবং ২০০ পৌরসভায় জয়ী হওয়ার পূর্বাভাব দেয়ার পর কারচুপি, জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হলে তা সাধারণ গ্রহনযোগ্যতা নাও পেতে পারে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠুভাবে হবে তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ। প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষসমূহ থেকে এসব অভিযোগ করা হলেও ভোটাররা নির্লিপ্ত।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts