বিডি মেট্রোনিউজ || নতুন বছরে হাতে হাতে নতুন বই। সারা দেশে স্কুলশিশুরা মাতোয়ারা নতুন বইয়ের গন্ধে। বছরের প্রথম দিন শুক্রবার দেশের সব স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির চার কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি নতুন বই। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩২ লাখ শিক্ষার্থী পাবে তিন কোটি ২৮ লাখ আট হাজার ৫৩টি বই ও অনুশীলন খাতা।
এবারের পাঠপুস্তক উৎসব দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে ফুলের মতো ফুটব, বর্ণমালার গরব নিয়ে আকাশ জুড়ে উঠব’। সকালে ঢাকার সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলে বেলুন উড়িয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক উৎসবের সূচনা করে দেন। আর মিরপুর ২ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
একইসঙ্গে সারা দেশের সব স্কুলে শুরু হয় নতুন বইয়ের এই উৎসব। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে দেখা যায় রঙিন ফিতে বাঁধা বইয়ের সেট; কারও হাতে বেলুন। অভিভাবকরাও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
উৎসব ঘিরে ল্যাবরেটরি স্কুল সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। উৎসব আয়োজনের সূচনা হয় বিদ্যালয়ে বিএনসিসি’র গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ আর এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পালের স্বাগত বক্তব্য শেষে আসে পাঠ্যপুস্তক হাতে তুলে দেওয়ার বিশেষ মুহূর্ত।
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ উৎসবমঞ্চে ১৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বই তুলে দেন। একইসঙ্গে অন্য সব শিক্ষার্থীর হাতেও পৌঁছে যায় নতুন বই। ছাত্র-ছাত্রীদের নাচ-গান, আনন্দ-উল্লাস আর লাল-সবুজ প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন, রঙ্গিন বেলুনে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। মঞ্চের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলুন ওড়াতে মাঠে যান শিক্ষামন্ত্রীসহ অতিথিরা। এ সময় বই হাতে মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার ধুম পড়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশাপাশি বিসিএসআইআর হাইস্কুল, ধানমণ্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কামরুন নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাফেজ আবদুর রাজ্জাক দাখিল মাদ্রাসার কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী এ উৎসবে অংশ নেন।
উৎসবের মাঠে নতুন বই নিয়ে ছোটাছুটির মধ্য স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির আর্য্য শ্রেষ্ঠ হাসান বলল, “নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বই পাইছি। অনেক মজা লাগছে।”
মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রঙবেরঙের বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রাথমিকের বই উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। মিরপুর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসমীন সুলতানা জানান, গতবারের তুলনায় এবার বইয়ের বাঁধাই ভালো হলেও কাগজের মান আগের তুলনায় কমেছে বলে তার মনে হয়েছে।
এ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ জানায়, বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে সে খুবই খুশি। “একদিনও অপেক্ষা করা লাগল না। গতকাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিল, আর আজ বই পেলাম।” মিরপুর এলাকার অন্তত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উৎসবে যোগ দিতে আসে।
প্রথম দিন অনেক শিক্ষার্থীর হাতে মাত্র একটি বই তুলে দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে সব বই পৌঁছে দেওয়া হবে বলে শিক্ষকরা জানান। বই বিতরণ শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।