বিডিমেট্রোনিউজ ॥ রাজধানীর কাকরাইলে চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার আসামি করা হয়েছে মৃত শাওনের বাবা আব্দুল করিমকে। পুলিশ বলছে পারিবারিক কলহ ছাড়াও আব্দুল করিমের সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বজনদের দাবি শামসুন্নাহারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে স্বামীর বিরোধ চলছিলো।
বৃহস্পতিবার রাত দশটায় নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী খোকন বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার ওসি কাজী মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই মামলায় নিহতের স্বামী আব্দুল করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী শারমিন আক্তার মুক্তাসহ তাদের এক আত্মীয়কে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে করিম ও মুক্তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, পারিবারিক শত্রুতার কারণে শামসুন্নাহার (৪৬) ও তার ছেলে সাজ্জাদুল করিম শাওনকে (১৮) হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম, ওই বাড়ির দারোয়ান, গৃহকর্মী ও তৃতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী মুক্তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
গ্রোসারি ব্যবসা ছাড়াও এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও পরিচালনায় করিম যুক্ত ছিলেন জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল বলেন, মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী। করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিনি চার বছর আগে মুক্তাকে বিয়ে করেন। তার একের অধিক বিয়ে থাকায় পুলিশ পারিবারিক কলহের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত পরিচালনা করছে।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডটি তারা সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেই অনুসন্ধান করছে। দ্রুতই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাকরাইল এলাকায় করিমের তিনটি বাড়ি রয়েছে। আসামি শনাক্তে বুধবার রাতেই ওই বাড়ির প্রবেশ গলির সামনের একটি এবং কাকরাইল ও এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
স্বজনদের দাবি, আবদুল করিম এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ে করেছেন। এছাড়াও একাধিক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। যা নিয়ে শামসুন্নাহারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে স্বামীর বিরোধ চলছিলো। সেই বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তাদের ধারণা।
নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে তার বোনের সঙ্গে আবদুল করিমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর বোনের সংসারে কোনো ঝামেলা ছিল না। অবশ্য দুলাভাই তখন খুব দরিদ্র ছিলেন। পরে টাকা পয়সা হওয়া ও ফিল্ম ব্যবসা শুরু করে তিনি বেপরোয়া বনে যান। যা আমার বোন মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়েই মূলত বিরোধ শুরু হয়। দুলাভাই প্রায়ই বোনকে মারধর করতেন।
এদিকে সন্ধ্যায় মা-ছেলের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, মা-ছেলের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে মায়ের বুকে একটি গভীর আঘাত রয়েছে। যেটি তার ফুসফুসকে ছিদ্র করে ফেলেছে। আর শাওনের ফুসফুস ও হৃদপিণ্ড গভীর আঘাতে ছিদ্র হয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।