মোবাইলে প্রেম, গণধর্ষণ শেষে হত্যার পর লাশ নদীতে

বিডিমেট্রোনিউজ, বরিশাল ॥  বখাটের সাথে মোবাইলে প্রেমের খেসারত দিতে গিয়ে প্রেমিক ও তার সহযোগীদের গণধর্ষণ সহ নির্মম নির্যাতনের পর প্রাণ হারিয়েছে নগরীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র প্যাথলজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার (২১)।

নরপশুর দল ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ছাত্রীর লাশ বলেশ্বর নদীতে নিক্ষেপ করে। ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় ‘মোবাইল ফোন প্রেমিক’ গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে। তবে পুলিশ ও ছাত্রীটির পরিবার লাশটিও খুঁজে পায়নি।

ছাত্রীটির মোবাইল ফোন প্রেমিক মো. সিরাজুল ইসলাম (২৫) ও সহযোগী সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র হাফিজকে (১৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় মঠবাড়িয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করে সেখানকার থানার পুলিশ। গ্রেফতারের পর কোতয়ালী মডেল থানা ও মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা।

গ্রেফতারকৃত সিরাজ মঠবাড়িয়া উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া গ্রামের ইব্রাহিম হাওলাদারের ছেলে। গণধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত হাফিজ মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া ইউনাইটেড হাই ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। নির্মমতার শিকার ছাত্রী সাদিয়া নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডেফুলিয়া খান বাড়ীর আলমগীর হোসেন খানের কন্যা।

কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আব্দুল ওহাব সাংবাদিকদের জানান, সাদিয়া নগরীর ডেফুলিয়া এলাকার বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয় সাদিয়া। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান মিলছিল না। এ ঘটনায় ছাত্রীটির বাবা গত ২২ নভেম্বর কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ছাত্রীর মোবাইল নাম্বারের সর্বশেষ অবস্থান ও মোবাইল ফোন প্রেমিক সিরাজের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। সে তথ্যের ভিত্তিতে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজ সাদিয়াকে গণধর্ষণ, বেধরকভাবে মারধর ও হত্যার পর লাশ বলেশ্বর নদীতে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে। এছাড়াও তার দুই সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। এরপর সহযোগী হাফিজকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু অপর একজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে সিরাজ জানায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নভেম্বরের প্রথম দিকে তাদের প্রেম হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে গত ১৯ নভেম্বর সাদিয়া দুপুরে মঠবাড়িয়া পৌঁছায়। বাসষ্ট্যান্ড থেকে সাদিয়াকে পৌর শহরের এক বাসায় নেয়। সেখানে সাদিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দেয় সিরাজ। পরে ওই বাসা থেকে সন্ধ্যায় সাদিয়াকে উপজেলার বড় মাছুয়া বটতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সিরাজ ধর্ষণ করে। পরে পালিয়ে যাওয়া সহযোগীকে ফোন করে আনে। সেও সাদিয়াকে ধর্ষণ করে। এরপর হাফিজকে ফোন দিয়ে আনা হয়। হাফিজও তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বলে নরপশু সিরাজ পুলিশকে জানিয়েছে।

সিরাজ আরো জানায়, তাদের পালাক্রমে ধর্ষণের পর সাদিয়া তাকে অনুনয় বিনয় করে বরিশালগামী বাসে উঠিয়ে দেয়ার জন্য। এক পর্যায়ে সে এই ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তখন তিনজন মিলে সাদিয়ার মুখ চেপে ধরে বেধরকভাবে কিল-ঘুষি ও লাথি দেয়। এতে সাদিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন সাদিয়াকে ধরে বলেশ্বর নদীতে কচুরিপানার মধ্যে চুবিয়ে ধরে। এতে তার নিথর দেহ ডুবে যায়। কিছুক্ষন পর লাশ ভেসে উঠে। তখন লাশটি নদীর স্রোতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, উভয় থানার পুলিশ যৌথভাবে বিভিন্ন জায়গায় রোববার বিকেল পর্যন্ত তল্লাশি করলেও সাদিয়ার লাশের সন্ধান মেলেনি। রাতে দুই ধর্ষক এবং হত্যাকারী সিরাজ ও হাফিজকে পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া থেকে বরিশাল কোতয়ালী পুুলিশের হেফাজতে এনে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বরিশালে মহানগরীতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ছাত্র-ছাত্রীরা।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts