মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি ॥ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের তৃণা বেগম নামে এক গৃহবধু পুলিশ স্বামীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার স্বামী হুমায়ুন কবির (৩১) বার বার যৌতুক চেয়ে তৃণা বেগমকে বিয়ের পর থেকেই শারীরিক নির্যাতন করে আসছে।
হুমায়ুন কবির পুলিশ কনস্টেবল হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই সে মারধর করে। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না পেয়ে গত ৯ অক্টোবর চাঁদপুর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে, নওদোনা গ্রামের তার স্বামী হুমায়ুন কবির, শাশুড়ি সুফিয়া বেগম (৪৮), শশুড় আঃ ওহাব প্রধান, ননদ তানজিলা বেগম, লাইলি বেগম, লাকী বেগম ও হাবিব উল্লার ছেলে সালাউদ্দিনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন তৃণা। মামলা নং ৩৬৬/১৭ইং।
মামলা এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮/০৭/১৬ তারিখে পারিবারিক ভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তাদের বিবাহ হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র সহ প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে তৃণাকে উঠিয়ে দেন তার পিতা-মাতা। কয়েক মাস ঘর সংসার করার পর তৃণাকে ফুসলাইয়া তার সমস্ত স্বর্ণাংকারগুলো নিয়ে যায় স্বামী হুমায়ুন। পরে তৃণা জানতে পারে যে তার স্বামীর পরকীয়া প্রেমিকাকে ওই অলংকারগুলো দিয়েছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তৃণাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।
তাদের সংসারে ‘তাসকিন আহমেদ’ নামে একজন ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে। ওই শিশুটির দিকে তাকিয়ে নির্যাতনের মধ্যেও সংসার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল তৃণা। কিন্তু তার স্বামী হুমায়ুনের যৌতুক নির্যাতন বেড়েই চলছে। তৃণার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার চায় হুমায়ুন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তৃণা পিতা হান্নান প্রধান ৭০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু হুমায়ুন ওই টাকা কাজে না লাগিয়ে প্রেমিকার পিছনে উড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর কথা কাটা কাটির এক পর্যায়ে মারধর ও নির্যাতন করে তৃণাকে শিশু সন্তানসহ পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এর কিছু দিন পরই হুমায়ুন বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে বুঝিয়ে তৃণাকে তার স্বামী নিয়ে যায় এবং তার কাছ থেকে আবার ৫ লাখ টাকা যৌতুক চায়। যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা জানালে আসামী সালাউদ্দিন তৃণাকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। অন্যান্য আসামীরা তৃণাকে মারধর করে এক কাপড়ে শিশু সন্তানসহ পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে তৃণা।
তৃণা বেগম বলেন, হুমায়ুন তার পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হলে তাকে কিছু বলতে না বলতেই আমাকে মারধর করে। যৌতুক চাইলে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে আরো বেশি করে মারধর করতো। গত ৭ ডিসেম্বর হুমায়ুন ও তার মামাতো ভাই অলিউল্যাহ আমার বাবার বাড়িতে এসে আমার ছোট শিশু সন্তানকে নিয়ে যাবে টানাটানি করতে থাকে। আমি এতে বাঁধা দিলে সে আমাকে অনেক মারধর করে। এবং ঘরের আলমিরা ভেঙ্গে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। ঘরের আসবাব পত্র ভাংচুর করে । এ ঘটনায় মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাইনি। আমি এ বর্বর নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোস্তফা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন তদন্ত করি। কিন্তু ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলেন, মূলত পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীর সাথে দ্বন্দ্ব। আমার বিরুদ্ধে এসব নিয়েই মামলা করেছে। মামলার এজাহারে উল্লেখিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমিও থানায় জিডি করেছি।