মাদকবিরোধী অভিযান: নিহত আরও ১০

ফেনীতে দুইজন, কুমিল্লায় দুইজন এবং নারায়ণগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া একজন করে মোট ছয়জন নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে।

এছাড়া মাগুরায় দুইজন এবং সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে একজন করে মোট চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ বলেছে, ঘটনাস্থলে মাদক থাকায় ওই তিনজনও মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল বলে তারা সন্দেহ করছে।

ফেনীর ফুলগাজীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাহমিত হোসেন শামীম (২৫) ও মজনু মিয়া মনির (২৩) নামে দুইজন নিহত হয়েছন।ফুলগাজী থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর বলছেন, বুধবার মধ্যরাতে ফুলগাজী উপজেলা আনন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় ওই দুইজন নিহত হয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে বলে ওসির ভাষ্য। তবে স্বজনদের দাবি, ওই দুইজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পুলিশে টাকা দাবি করে, পরে রাতে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

শামীমের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের জমিতে গরুর জন্য ঘাষ কাটছিল তার ছেলে। বেলা ২টার দিকে ফুলগাজী থানার এসআই শফিক এসে সেখান থেকে শামীমকে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রাতে ওকে গুলি করে হত্যা করেছে। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মজনু মিয়া মনিরের বোন রেজিনা বেগম। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এসে একদল লোক বুধবার রাতে ফেনী শহরের বড় মসজিদ এলাকায় মনিরের বোনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়। রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। টাকা দিতে না পারায় ভোর রাতে পুলিশ মনিরকে গুলি করে মেরেছে। রেজিনা বলছেন, তার ভাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার চাচা বিএনপির রাজনীতি করেন। পুলিশ ‘ষড়যন্ত্র করে’ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। দফায় দফায় তারা পুলিশকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন।

ওসি হুমায়ুন কবীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কাউকে বাড়ি থেকে তুলে আনেনি। টাকা চাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। মাদকের টাকায় তাদের পরিবার চালাত বলে স্বজনরা এসব মনগড়া অভিযোগ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফেনীতে পুলিশ ও র‌্যাবের এই কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত নয় দিনে ছয়জন নিহত হয়েছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাবুল ওরফে লম্বা বাবুল (৩৫) এবং সদর দক্ষিণে রাজিব (২৬) নামের দুইজন নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত ১টার দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আমানগণ্ডা সলাকান্দা নতুন রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবং রাত সোয়া ২টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্রাংক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের ভাষ্য। নিহত বাবুল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বৈদ্দেরখিল গ্রামের হাফেজ আহাম্মদের ছেলে। আর রাজিব সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি সংলগ্ন চাঙ্গিনী গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। দুজনেই থানার ‘তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী’ এবং বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক আইনের ৫টি  এবং রাজিবের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

মাগুরা শহরতলীর পারনান্দুয়ারী  হাউজিং প্রজেক্ট এলাকা থেকে বুধবার রাতে আইয়ুব শেখ ও মিজানুর রহমান কালু নামে দুইজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। মাগুরার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) সার্কেল ছয়েরউদ্দিন বলছেন, ‘মাদক চোরাকারবারিদের দুইপক্ষের গোলাগুলিতে’ ওই দুইজন নিহত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। আইয়ুব শেখের নামে হত্যা ও মাদক অইনে ২১টি এবং কালুর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। আইয়ুব শহরতলীর নীজনান্দুয়ালী এলাকার জব্বার শেখের ছেলে। আর কালু শহরের ভায়না টিটিডিসি পাড়া এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. সেলিম (৩২) নামে সন্দেহভাজন এক মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলছেন, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে দক্ষিণ নিমাইকাশারী এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম বাগমারা সানারপাড় এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। পুলিশ বলছে, সেলিম এলাকার ‘চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী’। স্থানীরা তাকে ‘ফেনসি সেলিম’ হিসেবে চেনে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা ও মাদক মামলার এক আসামি নিহত হয়েছে। বুধবার রাত ২টার দিকে উপেজলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ স্টিল ব্রিজ সংলগ্ন পাকা রাস্তার মোড় এলাকায় গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে বলে আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদারের ভাষ্য। নিহত আমির খাঁ উপজেলার চানপুর এলাকার সুরুজ খাঁর ছেলে। তার বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুটি মামলা, একটি হত্যা মামলাসহ মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মোট ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রাম থেকে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার পরিচয় জানাতে না পারলেও ঘটনাস্থলে মাদক ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কালিগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান। ভাড়াশিমলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পিয়ার আলী জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে চৌবাড়িয়া গ্রামের সিদ্ধেরপুকুর এলাকায় রাস্তার পাশে রক্তাক্ত ওই লাশটি পড়ে থাকতে দেখে তারা থানায় খবর দেন। পরে কালিগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) রাজীব হোসেন ও উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন সকাল ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে লাশটি নিয়ে যান।

নিহত ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ৪৫ থেকে ৫০ বছর। পরনে ছিল সাদা রঙের ফুল শার্ট ও চেক লুঙ্গি। তার চোয়ালে ও গলায় দুটি গুলির চিহ্ন ছিল বলে জানান পিয়ার আলী।

কক্সবাজার শহরে মাদক মামলার এক আসামির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে কলাতলী এলাকা থেকে লাশটি তারা উদ্ধার করেন। নিহত মোহাম্মদ হাসান (৩৬) কলাতলীর আদর্শগ্রাম এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় মাদক আইনের বেশ কয়েকটি মামলা থাকার কথা বলেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts