সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরও যে সন্তান হারানোর বেদনা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পরিবারটির জন্য আরো দুর্ভোগ থাকে এটা জানেন না অনেকেই। ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ওবায়দুর রহমানের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাই জানা গেল। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এখানে পুরো স্ট্যাটাসটি তুলে দেওয়া হলো:
আইনি দুর্ভোগ
নার্সিং পেশায় নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য স্ত্রীকে বাসে তুলে দিতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭ টায় উত্তরার কামারপাড়ার আশুলিয়া রোডে যায় ২২ বছর বয়সী খাইরুল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা অজ্ঞাত একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। বেঁচে যায় তার স্ত্রী। খায়রুল সেখানকার বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতো। বাড়ি দিনাজপুরে। সম্পর্কে আমার ভাতিজা।
খাইরুলের মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু লাশ এখনও সেখানেই আছে। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এনে মরদেহ গাড়িতে তোলা হয়েছে। তবে লাশ দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি এখনও। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে তুরাগ থানা পুলিশ।
কিন্তু এই আইনি প্রক্রিয়াটির কিছু বিষয় এত কঠিন যে সেই মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার পরিবারের পক্ষে তা পূরণ করা অসম্ভব। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে লাশের ময়নাতদন্ত করে তারপর মরদেহ দাফনের অনুমতি দেয় পুলিশ। কিন্তু পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ অার কাটা-ছেঁড়া করতে চায়নি পরিবার। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর পর শেষবারের মতো তার মুখ দেখার জন্য বাড়িতে অধীর অপেক্ষায় বাবা-মা।
কিন্তু ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করতে হলে নিহতের বাবা/মা ও স্ত্রীকে লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে। শুধু স্ত্রীর অঙ্গীকার যথেষ্ট নয়। অাইনি এ বাধ্যবাধকতার কারণে নিহতের বাবাকে তুরাগ থানায় এসে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে তবেই লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে হবে। মামলা না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও লাশ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়- পুলিশের এমন সাফ কথার পর একজন আত্মীয় জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের শরণাপন্ন হয়েও কোন লাভ হয়নি।
প্রিয় সন্তানের লাশ অানতে অগত্যা ৩৫০ কিলোমিটার দূর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন খাইরুলের বাবা ও ভাই। সশরীরে এসে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে তারপর সন্তানের লাশ নিয়ে যাবেন। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি। এ অবস্থায় একজন শোকগ্রস্ত পিতার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে তা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
নিহতের পরিবারকে লিখিত অঙ্গীকার দিতে ঢাকায় না এনে স্থানীয় থানা বা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেও এ কাজটি করা যেত। এতে শোকগ্রস্ত পরিবারটির ভোগান্তি কমতো। পাশাপাশি লাশের দাফনও হতো সময়মতো।
সর্বশেষ তথ্য, একজন আর্মি অফিসারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনে জেলা প্রশাসকের সুপারিশ মিলেছে রাত ১১টায়। এখন সুপারিশের কপি থানায় জমা দিয়ে পুলিশের ছাড়পত্র নিতে হবে। এরপর হয়তো লাশ নিয়ে রওনা দেয়া সম্ভব হবে। অবশ্য ততক্ষণে গাজীপুর পর্যন্ত অাসা নিহতের পরিবার পৌঁছে যাবে তুরাগ থানায়।
29.06.2018