জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইট অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। রাস্তা-ঘাট ব্রীজ-ইমারত, বাসাবাড়ি নির্মাণে ইটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তবে সনাতন পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের ফলে কমছে কৃষি জমি, দূষিত হচ্ছে বায়ূ ও পরিবেশ। পরিবেশর দূষণ কমাতে আর কৃষি জমি বাঁচাতে হলে ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানসম্মত ইট উৎপাদনে এরই মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মানিকগঞ্জের পুকুরিয়া এলাকায় স্থাপিত স্টোন ব্রিকস নামের আধুনিক অটো ব্রিকস প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৫ সালে থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে অটো মেশিনে উৎপাদন করছে মানসম্মত ইট। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন তিন লাখ ইট উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে স্টোন ব্রিকসের।
অটোমেটিক টানেল কিলন পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের ফলে দূষিত হচ্ছে না বায়ূ ও পরিবেশ। এছাড়া মাটির সাথে বালি ও বক্স পাইডার মেশানোর কারণে কার্বণ ডাই অক্সাইড,মাক্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বণ মনোক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমে যাওয়াতে কালো ধূঁয়া বের হয় না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিও হচ্ছে না। এছাড়া নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিকট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এসব ইট। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রয়েছে নিজস্ব মেডিকেল টিম।
স্টোন ব্রিকসের মানব সম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো: নিজামুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ৬শত লোক কাজ করছে। প্রত্যেক শ্রমিকের সকল প্রকার নিরাপত্তাসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি বিভাগেরই শ্রমিকরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে থাকে।
যানবাহন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো: সজির উর রহমান বলেন, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ইট তৈরির পরে তা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব যানবাহনের প্রত্যেক চালক ও তার সহযোগীদের সব সময় দিক নির্দেশনাসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে গ্রাহকরা তাদের পণ্যটি সময় মতো পেয়ে যায়।
অপারেশন বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, কিনলে থেকে যে ধোঁয়া(ওয়াস্টহিট) গতানুগতিক ইটভাটায় বাহিরে বের করে দেয়। কিন্তু অটোব্রিকসের এই কালো ধোঁয়াটিকে ডাকটিং ফাইবের মাধ্যমে পুনরায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করে থাকি। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। মাটির সাথে কোল মেশানোর ফলে ইটগুলো পুড়ানোর সময় কোনো ধোঁয়ার তৈরি হচ্ছে না। এই সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে। এজন্যই স্টোন ব্রিকস পরিবেশ বান্ধব একটি ইট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শ্রমিকরা জানান, স্টোন ব্রিকসে সকল শ্রমিকদেরকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় শারীরিক অসুস্থ্য হলে সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এজন্য প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক ভাবে একজন মেডিক্যাল অফিসার নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকদের আনা নেয়ার জন্য রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থাও।
মেইনটেন্স বিভাগের কর্মীরা বলেন, ক্লিন কন্ট্রোল রুম থেকে ইটের গুণগত মান রক্ষার্থে ক্লিন থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। টেমপারেচার দেখে কিভাগে কখন কোল মারতে হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া এ্যাম্পিয়ার জেনারেটরের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মীর রজ্জব আলী জানান, এটি সম্পূর্ণ অটোব্রিকস একটি প্রতিষ্ঠান। অটো মেশিনের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানসম্মত ইট উৎপাদন করা হয়। ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে অটোব্রিকসে কোনো আবর্জনা ময়লা ও কালো ধোঁয়া বের হয় না। যার ফলে আশেপাশের গাছপালা ও পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এজন্য এটি পরিবেশ বান্ধব প্রতিষ্ঠান।
আগামীতে পরিবেশ বান্ধব অটো ব্রিকসের মাধ্যমে মানসম্মত ইট উৎপাদান করবে জেলার সকল ব্রিকসের মালিকরা এমনটাই প্রত্যাশা করেন মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: খালেদ হাসান। তিনি বলেন, জিকজেক পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের সময় চুল্লি বা চিবনি দিয়ে প্রচুর পরিমান কালো ধোঁয়া বের হয় এতে বায়ূ দুষণও বেশি হয়। আর অটোব্রিকসের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কালো ধোঁয়া নাই বললেই চলে। অটোব্রিকসের মধ্যে মানিকগঞ্জে স্টোন ব্রিকস একটি মডেল ইট উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠান। তিনি জেলা অন্যান্য ব্রিকসের মালিকদেরকে আগামীতে অটোব্রিকসের মাধ্যমে ইট উৎপাদন করার আহবান জানান।