কলকাতায় শোকের ছায়া, কান্নায় ভেঙে পড়েন দেবশ্রী

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তাপস পালের মৃত্যুতে শোকেরা ছায়া টলিউডে। পর পর স্মৃতি মন্থন করছেন টলিউড তারকারা। চিরঞ্জিত থেকে জিৎ, দেবশ্রী থেকে শ্রাবন্তী সকলেই এই মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকাচ্ছন্ন অভিনেতার পরিবারও।

মুম্বইয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার ভোর ৩.৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তাপস পাল। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া বাংলা টলি মহলে।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে সহকর্মী তাপস পাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মীরা। খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর একাধিক সিনেমার নায়িকা দেবশ্রী রায়।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। একটার পর একটা ছবি করেছি আমরা।…এরপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শোকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্থ হয়ে আর কথা বলতে পারেননি দেবশ্রী।

তাপস পালের সহকর্মী ও বন্ধু চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, সুপারস্টার ছিলেন তাপস পাল। পাশাপাশি তিনি জানান, তাপসের শেষ জীবনটা অত্যন্ত খারাপ গেল, অত উজ্জ্বল ছেলের এই পরিণতি মানা যায় না।তিনিও স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘অপূরণীয় ক্ষতি হল।’

কথা বলার সময় চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর গলাও ছিল আবেগপ্রবণ।

তাঁর মৃত্যুতে শুধু সহকর্মী না, শোকপ্রকাশ করেছেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও। তিনি বলেন, “অসম্ভব উঁচুদরের অভিনেতা ছিলেন তাপস পাল। তাঁর তুল্য অভিনেতা বর্তমান টালিগঞ্জে কার্যত নেই। ” পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি তাপস পালের।

পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, তাঁর সঙ্গে ফ্যামিলি ও বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। তিনি জানান, তাপস হইহই করে কাজ করতেন, খেতে ভালবাসতেন। পাশাপাশি তিনি জানান, এক ভাল অভিনেতাকে হারাল টালিগঞ্জ।

শুধু এরা নন টলি সেলেবরা তাপস পালের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও তাপস পালের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রচনা ব্যানার্জী বলেছেন, তাঁর মতো অভিনেতা টলিউড আর পাবে না।

আমেরিকায় নিজের মেয়ের কাছে যেতে চেয়েছিলেন তাপস পাল। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। বিমান বন্দরেরি বুকে ব্যাথা শুরু হলে তাঁকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে।

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ তাপস পালকে ভর্তি করা হয় মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় অভিনেতাকে। ৬ দিন ভ্যান্টিলেশনে কাটানোর পর কিছুটা উন্নতি হয় অভিনেতার স্বাস্থ্যের। ৬ ফেব্রুয়ারি ভেন্টিনশন থেকে আইসিইউ-তে বের করা হয় তাঁকে। তবে সোমবার রাতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তাপস। ভোর ৩.৩৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

২০০১ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলে রাজনীতিতে। ২০০১ সালের বিধানসভায় তৃণমূলের টিকিটে জয়। ২০০৬এ আবারও ঘাস ফুলের এমএলএ নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে বড় দায়িত্ব পেলেন। এবার কেন্দ্রের নির্বাচনে জয়। ২০১৪ সালে ব্যাক টু ব্যাক কৃষ্ণনগর থেকে সাংসদ নির্বাচনে জয়।

কিন্তু এরপরেই মস্ত ভুল। ২০১৪ সালেই চৌমাথা গ্রামে গিয়ে এক ছোট্ট জনসভায় গিয়ে ভয়ঙ্কর মন্তব্য প্রকাশ করে ফেলেন ঘরের ছেলে তাপস। কু-মন্তব্যের পরেই ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সাহেবকে। দলও পাশ থেকে সরে যায় এহেন মন্তব্যের পর থেকে। চাপের মুখে ক্ষমা চাইলেও এরপর থেকেই নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে নেওয়া।

দলীয় বৈঠকে অংশ নিলেও আর প্রকাশ্যে সেই অর্থে কোনও কর্মসূচি কিংবা অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। এরপর ২০১৬ সালে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে নাম জড়ানো যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিল। আর ঘরে ফেরা হয়নি ঘরের ছেলের। ক্রমে সাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। চেয়েছিলেন আমেরিকায় মেয়ের কাছে চলে যেতে। তাও হল না। চলে গেলেন সবার সাহেব।

Print Friendly

Related Posts