করোনাকালে মানিকগঞ্জের হালচাল

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে নাজেহাল সারা বিশ্ব। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারি এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দিনরাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসন। করোনার প্রভাবে বদলে গেছে পুরো জেলার হালচাল।

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জ। দুইটি পৌরসভা ও সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এই জেলা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ টি জেলার সাথে রাজধানীতে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট ও ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বেশির ভাগ অংশই এই জেলায়।

মারনঘাতী করোন’র প্রভাবে বদলে গেছে জেলার হালচাল। করোনা সর্ম্পকে সচেতন করতে মরিয়া জেলা প্রশাসন। অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবারও পৌছে দিচ্ছে তারা। তবে শহরের বেশিরভাগ মানুষ সচেতন হলেও এখনও উদাসিন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। প্রয়োজন ছাড়াও নানা অজুহাতে বাইরে আড্ডাবাজি করে যাচ্ছেন তারা।

করোনায় যেমন যাচ্ছে মানিকগঞ্জের দিনকাল। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অবস্থান রয়েছে কেমন। এসব বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ননা তুলে ধরে এ প্রতিবেদন-

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট:

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ টি জেলার সাথে রাজধানীতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। বাস, ট্রাক ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে প্রতিদিন উভয় নৌরুট হয়ে পারাপার হয় প্রায় ৫ হাজার যানবাহন। তবে করোনার প্রভাবে এখন যার স্যংখ্যা অর্ধেকেরও অনেক কম। ব্যস্ততম নৌরুট এখন একেবারেই ফাঁকা। ঘাট পন্টুন এলাকায় অলস পড়ে আছে ফেরিগুলো।

ঢাকা-আরিচা মহসড়ক:

করোনা সংক্রামণ এড়াতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ নেই ঢাকা আরিচা মহাসড়কে। গেলো সপ্তাহে দু’দফায় পোশাক শ্রমিকদের পদচারনায় পুরো মহাসড়ক মুখোরিত থাকলেও এখন মানুষের আনাগোনা নেই ঢাকা আরিচা মহাসড়কে। জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ব্যতিত সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ। অকারণে মহাসড়কে চলাচল করলেই পড়তে হচ্ছে পুুুলিশি জেরায়।

মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল:

মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলা ও আশেপাশের জেলাগুলো থেকে স্বাস্থ্য সেবার জন্য জেলা শহরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে সকাল হলেই দেখা মিলতো দেড় হাজারের অধিক রোগীর। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা থাকতো এর কয়েকগুণ। তবে পুরো হাসপাতাল এলাকা এখন নিরব। অনেকটা রোগীর অপেক্ষায় চিকিৎসকেরা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া রোগী আসছে না হাসপাতালে। বর্হি বিভাগে আসছে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন রোগী। যার সংখ্যা শতাধিকও নয়। ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যাও খুব কম।

কল-কারখানা ও ইটভাটা:

মানিকগঞ্জের বেশির ভাগ কল-কারখানা করোনা সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ হয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে দেদারসে চলছে শতাধিক ইটভাটা। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায়ও বন্ধ হয়নি বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েই এসব ভাটায় কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলেও এক্ষেত্রে অনেকটাই নিরব প্রশাসন।

জেলার হাট-বাজার:

জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাপ্তাহিক হাটগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও বেশ কিছু বাজারের অবস্থা অনেকটা আগের মতোই। এসব বাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন সামাজিক দুরত্ব। জেলা ও উপজেলার শপিংমলগুলো বন্ধ থাকলেও গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নারাজ তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে। মাঝে মাঝে পুলিশের আগমনে মফস্বল এলাকার দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও পুলিশ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই খুলে যাচ্ছে তাদের দোকানপাট। অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো।

হতাশায় সবজি চাষিরা:

করোনা ভাইরাস সংক্রামণ রোধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবজি নিয়ে বিপাকে সবজি চাষিরা। পাইকারি বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম নেই সবজির। সঠিক পরিচর্যায় ভালো ফলনের পরেও হতাশায় সবজি চাষিরা। অপরদিকে সার ও কিটনাশকের সরবারহ না থাকার অজুহাত দিয়ে বেশি দামে সার ও কিটনাশক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

জেলা প্রশাসন:

করোনা সর্ম্পকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসক দিন-রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সচেতন রয়েছে প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। অসহায় মানুষদের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। খাবারের প্রয়োজন হলেও শুধু ম্যাসেজ বা মুঠোফোনে কল দেওয়ার নির্দেশানা দিয়েছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস।

পুলিশ প্রশাসন:

করোনা সংক্রামণ এড়াতে কঠোর অবস্থানে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ। সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরি করতে এলাকা এলাকায় মাইকিং করছে তারা। অব্যাহত রয়েছে পুলিশি টহল। মহাসড়কে রয়েছে পুুলিশের একাদিক চেক পোষ্ট। যানবাহন নিয়ে বাইরে বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে।

করোনা সংক্রমণ:

সারাদেশের ন্যায় করোনা ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত মানিকগঞ্জবাসীও। ঠান্ডা, জ¦র ও কাশিতে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হলেও তাদের কারো মাঝে পাওয়া যায়নি করোনার উপস্থিতি। তবে ফরিদপুর থেকে আগত সিংগাইরে তাবলীগ জামাতের প্রথমে একজন ও পরে তিনজনসহ মোট চার জনের মাঝে করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু করোনায় এখনো পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলায় কারো মৃত্যু হয়নি।

শহর ও মফস্বল এলাকার সচেতনতা:

শহরবাসী করোনা নিয়ে বেশ সতর্ক থাকেলও উদাসিন মফস্বল এলাকাবাসী। এখনো অনেক এলাকার বাসিন্দারা চলাচল করছেন নিজের ইচ্ছেমতো। বিকেল হলেই মাঠ বা রাস্তাঘাটে বসে আড্ডা দিচ্ছেন একত্রে। করোনা নিয়ে তর্ক করার ফলে ঘটছে হাতাহাতির ঘটনাও। এলাকার ছোট ছোট রাস্তাগুলো এক শ্রেনীর মানুষ স্বেচ্ছায় আটকে দিলেও অনেকে আবার করছে এর বিরোধিতা। শহর এলাকায় ম্যাজিষ্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল টিম দিনভর কাজ করলেও গ্রাম এলাকায় তার অবস্থান মোটেও নেই বলা যায়।
Print Friendly

Related Posts