বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এক বিবৃতিতে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির সামাজিক সুরক্ষা ও প্রণোদনা বিতরণে নজরদারি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার শিল্প ও সেবা খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত, রপ্তানী উন্নয়ন তহবিলসহ উৎপাদন খাতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য ৭২,৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
করোনাভাইরাসে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরা নয় এদেশের সাধারণ কর্মজীবি, হতদরিদ্র, প্রান্তিক মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের জন্য কোন প্রণোদনা ঘোষিত হয়নি। স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য টিসিবি সীমিত আকারে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করলেও তা শুধুমাত্র শহর এলাকায় সীমিত রয়েছে।
এছাড়াও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী সাধারণ জনগণ, দিনমুজর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারনের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমমের আওতা বৃদ্ধি (যার মধ্যেঃ ত্রাণ হিসাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কর্মহীন জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জন্য ভাতা প্রদান) এবং এ ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এ সমস্ত সহায়তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ সকল সহায়তা বিতরণে নানা অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমাগত বাড়ছে।
রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলিতে করোনা পরীক্ষা ও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও কার্যকারিতা খুবই সীমিত। অপরদিকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার তেমন কোন ব্যবস্থা ব্যবস্থা না থাকায় দেশব্যাপী স্বাভাবিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে সাধারণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। এ প্রেক্ষিতে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা।
সরকার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য প্রণোদনা বাজেট বরাদ্দ দিলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য “সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের” প্যাকেজ ঘোষনা হয়নি। এছাড়াও কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার মূল যোগানদাতা কৃষক, কৃষিখাত, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ খাতের জন্য প্রণোদনার কোন ঘোষণা হয়নি।
সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট জনগোষ্টির ২১.৮% অর্থাৎ ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে, যার সাথে যুক্ত হয়েছে দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত মানুষ যারা প্রতিদিন আয় থেকে সংসার চালায়। দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সকল দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে দুঃস্থ, প্রান্তিক কৃষক, স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন জীবিকা বিশাল হুমকির সম্মুখীন।
করোনার ক্ষয়ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি সুবিবেচনার আহবান জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে:
১. দেশের দুঃস্থ, অতি দরিদ্র থেকে দরিদ্র, শহরের বস্তিবাসী, কর্মহীন ৮০ লক্ষ পরিবারের জন্য আগামি জুলাই ২০২০ পর্যস্ত খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত করা।
২. প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য অবিলম্বে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাজেট বরাদ্দ করা এবং ১০ টাকায় চাল বিক্রিসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সকল কার্যক্রমের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৩. দেশে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার মূল যোগানদাতা কৃষক, কৃষিখাত, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ খাতের জন্য পৃথক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা।
৪. টিসিবির আওতায় খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির আওতা জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বৃদ্দি করা, টিসিবি ও ডিলারদের কার্যক্রম নাগরিক পরীবিক্ষনের আওতায় আনা।
৫. রাজধানীর ও বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরে সাধারণ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। করোনা মোকাবেলায় বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলিকে আওতায় আনা ও নজরদারির জোরদার করা।
৬. করোনা সংক্রমন চলাকালীন সময়ে চিকিৎসা সেবায় জড়িত সকল চিকিৎসক ও কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৭. দেশের কর্মহীন, প্রান্তিক ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪০ লক্ষ পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর ব্যবস্থা করা।
৮. ত্রাণ, প্রণোদনা ও অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী সহায়তা প্রদানে খাদ্য উপকরণের পরিবর্তে নগদ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৯. দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী ৩ কোটি মানুষকে আগামি ৬ মাসের জন্য ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনা সুদে ব্যাংক থেকে আপদকালীন জরুরী ঋন (ফেরত যোগ্য) সহায়তা প্রদান করা।
১০. দেশের সরকারী-বেসরকারী সকল শিল্প, কলকারখানা. শিল্প, গার্মেন্টস, অফিস-আদালতে কর্মী ছাটাই, বেতন-বোনাস কমানো ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
১১. বাড়ী ভাড়া, গ্যাস, পানি, বিদ্যুত বিল মওকুপ এবং আয়কর, সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স খাতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা।
১২. ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সুদ, ফিস ও সার্ভিস চার্জ আদায় আগামি ১২ মাসের জন্য স্থগিত রাখা।
১৩. ডিজিটাল সেবা, হটলাইন সেবাগুলির কার্যকারিতা ও গ্রাহক ভোগান্তি রোধে কেন্দ্রিয় ও জেলা পর্যায়ে তদারকি জোরদারে কমিটি গঠন করা।
১৪. ত্রাণ, সামাজিক সুরক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা, প্রণোদনাসহ সকল সরকারি-বেসরকারি সহায়তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও নাগরিক পরীবিক্ষন জোরদার করতে বিতরনের সকল পর্যায়ে দেশের ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিনিধি হিসাবে ক্যাব’র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা ।
১৫. করোনা মোকাবেলায় সকল পর্যায়ে গঠিত কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিনিধি হিসাবে ক্যাব এর প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করা।