এস এম ইলিয়াস জাবেদ, কলাপাড়া: করোনা পরিস্থিতিতে কুয়াকাটা পৌরসভার জেলেদের বিশেষ ভিজিএফ’র ১.৭৬০ মেট্রিক টন চাল উধাও হওয়ার ৬দিন পরও এর কোন হদিস মেলেনি। যদিও বাজার থেকে কিনে ঘটনার পরদিন সুবিধাভোগী ২২ জেলেকে চাল বিতরন করে কুয়াকাটা পৌরসভা।
ভিজিএফ’র চাল সংক্রান্ত এ দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে ৬এপ্রিল ইউএনও’র নির্দেশে মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিকে দু’দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হলেও রোববারও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। তবে ভিজিএফ চাল কেলেংকারির পর শনিবার কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য আগাম বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধ করে একটি ’প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ স্থানীয় প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রেরণ করা হয়।
পৌরসভার কাউন্সিলরদের স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ’কুয়াকাটা পৌরসভার চাল বিতরনে অনিয়ম, ২২ জেলে চাল পায়নি ও চাল চুরি হয়েছে বলে একটি মহল রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষে পৌর মেয়র আ: বারেক মোল্লার
বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আমরা কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর বৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামী পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী ও কতিপয় সুবিধাবাদী রাজনৈতিক চক্র ফায়দা হাসিল করার জন্য
কুয়াকাটা পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়াকাটা পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, চাল উত্তোলনের সময় খাদ্য গুদাম থেকেই পৌনে ২ মেট্রিক টন চাল বিক্রী করে দেয়া হয়েছে কলাপাড়া শহরের রুপ ষ্টোর এর মালিকানাধীন এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কাছে। বিক্রীর পর ওই ব্যবসায়ী তার ষ্টোরে চাল নিয়ে বস্তা পরিবর্তন করে ফেলেন।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রতিবছর বালতি দিয়ে চাল দেয়া হয়। যাতে বিতরনের পর অনেক চাল উদ্বৃত্ত থাকে। যা দিয়ে বাকী জেলেদের দেয়া হয়। এবছর করোনা পরিস্থিতিতে চালের বস্তা বিতরনে বাধ্য হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর আলীপুর মৎস্যবন্দর ও কুয়াকাটা থেকে উক্ত পরিমান চাল কিনে এবং চাল পাওয়া জেলেদের কাছ থেকে রাতে সরকারী সীল সম্বলিত বস্তা এনে তাতে ভরে পরদিন চাল বিতরন করা হয়।
পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর বলেন, ’মেয়র আমাদের ডেকে পৌরসভার সকলের মান ইজ্জত রক্ষার জন্য প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর দিতে বলায় সকলে মেয়রের দিকে চেয়ে স্বাক্ষর দিয়েছি। যা মেয়রের ছেলে চা-নাস্তা ও বিজ্ঞাপনের টাকা সহ প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পৌঁছে দেয়। আসলে মেয়র তো চাল চুরি করেনি। কিন্তু চালের এখনও কোন হদিস পাওয়া যায়নি।’
এদিকে মার্চ’র ৩০ তারিখের দিকে মেয়রের ক্ষমতাপত্রের বলে পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈয়বুর রহমান খাদ্য গুদাম থেকে ৫৩০ জেলের ভিজিএফ বরাদ্দের ৪২.৪০০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করে কুয়াকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখেন। এরপর ওই বিদ্যালয় থেকেই জেলেদের চাল বিতরন করা হয়। বিতরনের ২য় দিন ৬এপ্রিল ২২জেলে চালের টোকেন নিয়ে খালি হাতে বাড়ী ফিরে যাওয়ার পর বিষয়টি জনসম্মূখে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
কলাপাড়া খাদ্য গুদাম’র সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো: জাকির হোসেন জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর মো: তৈয়বুর রহমান রেজিষ্ট্রারে স্বাক্ষর করে খাদ্য গুদাম থেকে ৪২.৪০০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করে নিয়ে যান। তাকে চাল ওজন করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর মো: তৈয়বুর রহমান বলেন, ’মেয়র আমাকে চাল উত্তোলনের জন্য ক্ষমতাপত্র দিয়ে ক’দিন আগে খাদ্য গুদামে পাঠায়। আমি গুদাম থেকে চাল এনে পৌরসভার ষ্টোরে রাখি। এরপর বিতরন কালে চাল কম হওয়ায় মেয়র আমাকে চাল কিনে দিতে বলায় আমি বাজার থেকে চাল কিনে দিয়েছি। কিভাবে চাল কম হল বুঝতে পারছিনা।’
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আ: বারেক মোল্লা বলেন, ’কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহনে ইচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা তার ফেসবুকে আমাকে জড়িয়ে চাল বিতরনে অনিয়ম সংক্রান্ত মন্তব্য করায় পৌর কাউন্সিলররা প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আসলে ভিজিএফ নিয়ে কোন অনিয়ম হয়নি। সুবিধাভোগী জেলেরা সঠিক পরিমানে চাল পেয়েছে।’
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, ’কুয়াকাটা পৌরসভার জেলেদের ভিজিএফ সংক্রান্ত চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’