জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: ‘আমরা খেটে খাওয়া গরীব মানুষ, আমাগো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো বালাই নাই। সারাদিন কাম করে বিহান বেলা বাড়ি যামু, বৌ-পোলাপাইন নিয়া পেট ভইরা খামু তাতেই আমাগো শান্তি। এক বেলা কাম না করলে, না খাইয়া থাকবুনে বাড়ির হগ্ললতেই আমাগো করোনা ধরবুনে না’।
কথাগুলো বলছিলেন ‘মেসার্স সালেক ব্রিকস’র শ্রমিক বরুন্ডি এলাকার বিল্লাল হোসেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বিরামহীনভাবে মেসার্স সালেক ব্রিকসে শ্রমিকরা ইট লোড-আনলোডের কাজ করছে সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই। তাছাড়া তাদের মুখে কোনো মাস্ক নেই। দুই-একজন শ্রমিক নিজের টাকায় একটি বা দুটি মাস্ক কিনলেও তা ধুলায় নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থ অভাবে মাস্ক কিনতে না পারায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে কাজ করে যাচ্ছে ওই সব হতদরিদ্র শ্রমিকরা।
ওই ভাটার আরেক শ্রমিক আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমরা গরীব! আমাগো কাম না কইরা খাইলে মরা ছাড়া কোনো গতি নাই, তাইলে কাম কইরাই মরমু। কাম শ্যাষে বাজারে যামু তাও যাইবার পারি না, পুলিশ নাকি মাইনশেরে এডা-সেডা জিগায়, ওই কারণে তাউ যাইনা। পলাইয়া ইট খোলায় কাম মরমু তাও আবার আপেরা আইয়া এডা-সেডা জিগান তাইলে জামু কনে আর খামুকি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও এক শ্রমিক বলেন, ‘পেটের দায়ে ভাটায় কাম করি, টিপিতে প্রত্যেক দিন দেহি করোনা নামের এক অসুক আমাগো দেশে আইছে, এইডা হইলে কেউ বাঁচে না। এহন কাম না করলে খামু কি, তাউ দুইডা মাস্ক কিনছিলাম, আমি কাম করি ধুইলার মধ্যে, দুইডাই নষ্ট হইয়া গেছে। কোম্পানির ম্যানেজার তুহিনের কাছে কইছিলাম সে কইছে কাম শেষে টাকা দেই কিনা নিবার পারো না। একটা মাস্কের দাম ২০-৩০ টাকা যার জন্য আর কিনি নাই।’
মেসার্স সালেক ব্রিকসের ম্যানেজার তুহিন বলেন, জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কেউ বলেনি তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে। তবে আমরা প্রত্যেক শ্রমিককে মাস্ক দিয়েছি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকরা কাজ করছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্সকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।