বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সতর্কতার অংশ হিসেবে সবাইকে নিজ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনই প্রেক্ষাপটে অর্ডার করার একদিনের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ ২৫টিরও বেশি জেলার নাগরিকদের বাড়িতে বাড়িতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ।
গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়ার এই কার্যক্রম চালু করে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি। যাত্রা শুরুর প্রথম দিকে সরবরাহের সময় নিয়ে গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সেই অভিযোগ তুলনামূলকভাবে খুবই কম। সর্বনিম্ন এক ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য গ্রাহকদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইভ্যালির এক্সপ্রেস শপে এখন বেশিরভাগ পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আর এমন সেবায় বেশ সন্তুষ্ট ক্রেতারা।
মানিকগঞ্জের মহাদেবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিনুর হোসেন ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপে অর্ডারের এক দিনের মধ্যেই তার পণ্যের সরবরাহ পেয়েছেন। নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইভ্যালির অফিসিলিয়াল গ্রুপে তিনি লেখেন, ধন্যবাদ ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ মহাদেবপুর ইউনিয়ন, মানিকগঞ্জকে এত দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ ইভ্যালিকে মানিকগঞ্জে এক্সপ্রেস শপ দেওয়ার জন্য। বুধবার (১৫ এপ্রিল) অর্ডার করে বৃহস্পতিবারেই (১৬ এপ্রিল) ডেলিভারি পেয়ে গেছি।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা মাহের চৌধুরী বলেন, শুক্রবার (১০ এপ্রিল) কোকা-কোলা এবং স্প্রাইট অর্ডার করি। পরের দিন দুপুর ১টায় অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্যের ডেলিভারি পেয়ে যাই।
এদিকে ইভ্যালির এমন ব্যবসায়িক উদ্যোগে বেশ সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরাও। মিরপুর এলাকায় এক্সপ্রেস শপ পরিচালনা করেন এমন এক ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ বলেন, লকডাউনের সময় থেকে তো ব্যবসা একরকম বন্ধ। আমরা যারা গ্রোসারি আইটেম বিক্রি করি দোকানে আমাদের তো দৈনিক আয়। এমন সময়ে ইভ্যালির এমন এক্সপ্রেস শপের উদ্যোগ আমাদের ব্যবসার চাকাকে সচল রেখেছে। আমাদের বিক্রির ওপর একটা কমিশন পাচ্ছি আমরা, সঠিক সময়ে পেমেন্টও পেয়ে যাচ্ছি। আবার ইভ্যালি আমাদের থেকে এখন কোন কমিশনও নিচ্ছে না। কাজেই আমাদের আয়ের একটা পথ খোলা থাকছে ইভ্যালির মাধ্যমে।
ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ১৩টি এলাকার জন্য দুইটি করে মোট ২৬টি ভার্চুয়াল শপ নিয়ে এক্সপ্রেস শপ চালু করি আমরা। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ ২৫টিরও বেশি জেলায় চালু করা হয়েছে দুই শতাধিক ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ। এদের মধ্যে ঔষধ সরবরাহের জন্য আছে ২২টি ফার্মেসি এক্সপ্রেস শপ। জেলা পর্যায় পেরিয়ে এক্সপ্রেস শপের কার্যক্রম চালু আছে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা পর্যায়েও। এটা আমাদের একটা সিএসআর উদ্যোগের মতো। গ্রাহকদের ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছি যেন তারা ঘরে বসেই অনলাইনে পণ্য কিনতে আরো বেশি আগ্রহী হন। অন্যদিকে সেলারদেরও বোনাস দিচ্ছি যেন তারা কোনভাবেই বাজার মূল্যের থেকে বেশি দাম না রাখেন।
রাসেল আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার অর্ডার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অনুমান, অচিরেই দৈনিক অর্ডারের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌঁছাবে। শুরুর দিকে আমরা এত অর্ডারের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তাই কিছু অর্ডার ডেলিভারিতে সময় লাগছিল। আমরা যে এখনো শতভাগ সফলতার সাথে ডেলিভারি দিতে পারছি তা না। আর এর কারণ করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা। পণ্যের সরবরাহ কম, ডেলিভারি ম্যানও চাহিদার তুলনায় কম এছাড়াও আরও সমস্যা আছে। তবুও আমাদের সফল ডেলিভারির অনুপাত ৯৫ শতাংশের ওপরে। এটাকে আমরা শতভাগে নিয়ে আসতে চাই। আমাদের একটা ‘ওয়ান ডে ডেলিভারি’ চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে আমরা পূরণ করতে চাই। এজন্য আমরা শুরু থেকেই সেলারদের কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি।
এদিকে ইভ্যালির মতো বিভিন্ন মতো বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের এমন সেবাকে সাধুবাদ জানিয়ে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, করোনার এই সময়ে দেশে ই-কমার্সের গুরুত্ব নতুন করে উঠে এসেছে আমাদের সামনে। এমন প্রেক্ষাপটে ইভ্যালির মতো ইকমার্স এবং ই-কমার্স ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য গ্রাহকদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। একবার ভাবুন, এই সেবাটা যদি না থাকতো তাহলে এমন অবস্থায় কি হতো? মুদি আইটেম, ঔষধ এসব এখন ঘরে বসেই পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ইভ্যালিসহ যারাই এই সেবা দিচ্ছেন তারা সবাই সংকটকালীন এই সময়ে দারুণ কাজ করছে। আমরা ই-ক্যাবের পক্ষ থেকেও তাদের সবরকমের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। সরকার এবং প্রশাসনের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম নীতিগত সহায়তা তাদেরকে পাইয়ে দিতে কাজ করছি আমরা। যেমন সংশ্লিষ্ট মহলে আলাপ আলোচনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। আমরা আশা করছি, সময়ের সাথে সাথে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ইকমার্সগুলো নিজেদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে তাদের পণ্য সরবরাহ করবে।
এদিকে রাজধানীর বাইরে পাবনা, খুলনা, কুমিল্লা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নীলফামারী, ঈশ্বরদী, সিলেট, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, নওগাঁ, পটুয়াখালী, বরিশাল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, ফরিদপুর, গাজীপুর এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের এই সেবা দিয়ে আসছে ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ। এর আওতায় জেলা শহর এবং জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা রয়েছে। ইভ্যালিতে প্রায় ২০ লাখ ক্রেতা এবং ২০ হাজারের বেশি সেলার রয়েছেন।
এক্সপ্রেস শপে বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ বাজার মূল্যের ভেতরেই পণ্য বিক্রিতে উৎসাহিত করতে বিক্রেতাদের পাঁচ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হচ্ছে। আর পণ্যভেদে কেনাকাটার ওপরে বিকাশে মূল্য পরিশোধ করলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও কিছু কোমল পানীয় পণ্যে শতভাগ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে ইভ্যালি।