জাহিদুল ইসলাম, ভোলা: ভোলার মাল্টা বিদেশী মাল্টার চাইতে আকারে বড় এবং বেশি রসালো। ভোলা জেলায় ৩ বছর আগে সীমিত আকারে মাল্টা চাষ শুরু হলেও বর্তমানে তা বেশ সম্প্রসারণ লাভ করেছে।
প্রথম বছর ২০১৭ সালে ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। আর বর্তমানে ৩১ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।
দেশে উদ্ভাবন হওয়া বারি মাল্টা-১ জাতের এই রোসালো সুসাদু ফল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উপকূলীয় এই জেলায়। আমাদের দেশী এই মাল্টা বিদেশী মাল্টার চাইতে আকারে বড় এবং বেশি রসালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর মাল্টা চাষে অনেকে পেয়েছেন সফলতা। সব মিলিয়ে এখানে মাল্টা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এক সময় মনে করা হতো মাল্টা বা লেবু জাতীয় ফল পাহাড়ি এলাকাতেই শুধু ভালো হয়। কিন্তু পরে পিরোজপুরে এর সফল চাষ হওয়ায় এই অঞ্চলকে মাল্টার জন্য বেশ উপযোগী মনে করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে উদ্ভাবন হওয়া জাতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যেগে ২০১৭ সালে বাংলাশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র আবিস্কৃত বাঢ়ি মাল্টা-১ জাতের ৬৩টি চারা পরীক্ষামূলক বাপ্তা ইউনিয়নে চাষ শুরু হয়। প্রথম বছর সফল হওয়াতে পরের বছর অনেকেই মাল্টা চাষে ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রথম বছর সদরে ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও চলতি অর্থবছরে ২৫ হেক্টর জমিতে পৌঁছায়। প্রতি বছরই এই চাষ সম্প্রসারণ এবং চাষিদের মধ্যে ইচ্ছা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাল্টা চারা কলম পদ্ধতিতে হওয়ায় প্রথম বছরই ফলন আসে। একটি মাল্টা গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মসে গাছে ফুল আসে আর বাজারে তোলা হয় সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। অধিক ফলনের জন্য প্রথম দুবছর গাছ থেকে মাল্টা ফল ফেলে দিতে হয়। বর্তমানে অধিকাংশ মাল্টা চাষিই ফল বাজারে বিক্রির অপেক্ষায়।
উপজেলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মাল্টা চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, প্রথম থেকেই তার মাল্টা চাষে আগ্রহ। তাই ২০১৮ সালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ একর ১০ শতাংশ জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। ১ হাজার গাছের চারা রোপন করেন তিনি প্রতি পিস ১০০ টাকা দরে মোট ১ লাখ টাকায়। এছাড়া জমি প্রস্তুতে আর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয় তার।
তিনি জানান, এবছর গাছ নতুন থাকায় প্রায় ৪০০ গাছে ফলণ এসেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বাজারে তুলতে পারবেন। আশা প্রকাশ করেন, এই ৪’শ গাছ থেকে ৩ টন মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন। প্রতি কেজি দেড়শ টাকা পেলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে স্বপ্ন তার।
আরেক মাল্টা চাষি সদরে বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব বলেন, তার মাছের খামারের পাড়ে ২০০ মাল্টা গাছ রয়েছে। ২০১৭ সালে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথম তার খামারে মাল্টা গাছ রোপন করা হয়। এ ছাড়া সরকারিভাবেও বেশ কিছু গাছের চারা পান তিনি।
তিনি বলেন, গত বছর থেকেই তার ফল বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাল্টার ফলণ এসেছে। আশা করছেন এবছর ৪ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন। এই মাল্টাটা কিন্তু পাকা হলেও এর রং বদলায় না। সবুজই থেকে যায়। তাই কেউ কেউ মনে করতে পারে এটা কাঁচা। কিন্তু যে একবার কিনে খায় সে আবার কিনতে আসে।