বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও ক্যাম্পেই ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতায় বিআরটিএ সদর কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে “পাবলিক পরিবহনে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সংক্রান্ত বেসলাইন সার্ভের প্রতিবেদন প্রকাশ ও করণীয়” শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর শতভাগ পাবলিক পরিবহন (বাস) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না আলোচ্য সভার গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে উঠে আসে এ তথ্য চিত্র। গত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রাজধানীর ২২টি রুটে এবং ৪১৭টি ননএসি বাসে ক্রসসেকশোনাল জরিপ কার্যটি পরিচালিত হয়।
জরিপ পরিচালনা কল্পে দৃশ্যমান হয় যে ৯১.৩% চালক ও হেলপারগণ সরাসরি বাসে ধূমপান করে থাকে।এবং ১০০% পাবলিক পরিবহন (বাস) এ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ পাওয়া যায়নি। সর্বপোরি ১০টি বাসের মধ্যে প্রায় ৯টি বাসেই ধূমপানের নিদর্শণ পাওয়া যায়।
এ জরিপ ফলাফল থেকে প্রতিয়মান হয় যে ঢাকা শহরের ১০০% পাবলিক পরিবহন (বাস) এ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদিও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে সকল পাবলিক পরিবহন ১০০% ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে।
পাবলিক পরিবহন জরিপ ফলাফল থেকে উল্লেযোগ্য সুপারিশমালা হচ্ছে- আইন ভঙ্গ করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করণ ও রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ রাখার পাশাপাশি পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের সচেতন করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা।
উক্ত সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নুর মোহাম্মদ মজুমদার, চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব বিআরটিএ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার অলিউর রহমান সচিব- বিআরটিএ, ড. শরিফুল ইসলাম, লিড কসালটেন্ট ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), ইকবাল মাসুদ পরিচালক হেল্থ ও ওয়াস সেক্টর- ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল ইসলাম,পরিচালক (প্রশিক্ষণ), বিআরটিএ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন শারমিন রহমান, প্রোগ্রাম অফিসার, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, হেল্থ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে ইকবাল মাসুদ বলেন, ধূমপানে শূধু নিজের নয় বরং পরোক্ষ স্বাস্থ্য ক্ষতিও উল্লেযোগ্য কারণ। তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি কোন পাবলিক পরিবহনে আইন অনুযায়ী ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপন না করে থাকে তাহলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যাতে পরিবহনের ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান না করেন। তাহলে অবশ্যই সকল পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ আইন মানতে বাধ্য হবেন।
সায়দাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কালাম বলেন, যদি চালক ও হেলপারগণ নিজেরা পরিবহনে ধূমপান থেকে বিরত থাকেন তাহলে যাত্রীদেরকেও ধূমপান হতে বিরত থাকতে পরামর্শ দিতে পারবেন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সকল বাস কাউন্টারে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপন করতে হবে।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর ড.শরিফুল ইসলাম বলেন, বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বাস চালক ও শ্রমিকদের তামাক নিয়ন্ত্রন আইন মানতে বিভিন্ন উপায়ে সচেতন ও উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে পাবলিক পরিবহনে সকলের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস প্রদানে ধূমপানমুক্ত রাখার শর্তারোপ করতে হবে।
প্রধান অতিথি নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সকল পরিবহনে ধূমপানমুক্ত চিহ্নিত সাইনেজ স্থায়ীভাবে স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ৯০% চালক ও হেলপারদের সচেতন করা সম্ভব। বাকি ১০% যারা সচেতন করার পরেও আইন মানতে নারাজ তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যদি সকল পরিবহন শ্রমিক, পেশাদার চালক ও হেলপারগণ আইন প্রতিপালনে সচেতন হয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে আগামি ২০৪০ সালের মধ্যে একটি তামাকমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব হবে।
আলোচ্য সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাভার পৌরসভার নিবার্হী কর্মকর্তা শরফউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সহকারী পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক (গুলশান বিভাগ) নিউটন দাস, সিটিএফকে বাংলাদেশ এর গ্রান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া ও প্রোগ্রাম অফিসার (এ্যাডভোকেসী এন্ড রিসার্চ) আতাউর রহমান মাসুদ এবং বিআরটিএর পরিচালক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনজিও প্রতিনিধিগণ।
তথ্যসূত্র: মোহাম্মদ রুবায়েত- মিডিয়া ম্যানেজার, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর|