নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার একলাশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন নূর হোসেন রাসেল ও সোহাগ। মামলার এজাহারে তাঁদের নাম নেই। আগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের সম্পৃক্ততা থাকায় গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় গত সোমবার থেকে আসামি মো. রহিম ও রহমত উল্যা তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। এ ছাড়া মামলায় প্রধান আসামি বাদল দুটি মামলায় সাত দিন এবং একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (৩ নম্বর আমলি আদালত) বিচারক মাসফিকুল হক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ওসি জানান, রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় নূর হোসেন রাসেল ও সোহাগের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন দেলোয়ার বাহিনীর বাদলসহ অন্যরা। এরপর তাঁরা গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। সেখানে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। এই মামলার পলাতক আসামিরা হলেন আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব ও আরিফ। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তাঁরা সবাই একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য।

বাহিনীপ্রধান দেলোয়ারকে গত রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। বেগমগঞ্জ থানায় করা দুটি মামলায় তাঁর নাম নেই। তবে তাকে ওই দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। দেলোয়ারকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা অস্ত্র মামলায় দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দুপুরে দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ফাহমিদা বেগম দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একলাশপুর ইউনিয়নে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে ওই গৃহবধূকে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন দুবার ধর্ষণ করেন। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা এবং দেলোয়ারের ভয়ে তিনি সে কথা প্রকাশ করতে পারেননি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে নির্যাতিত ওই নারী এমন অভিযোগ করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফজলুল কবিরের নেতৃত্বে একটি তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে। পরে দুপুরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আল-মাহমুদ ফজলুল কবির এসব কথা বলেন।

ওই নারীর বরাত দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, ‘ওই নারী বলেছেন, প্রথমবার দেলোয়ার তাঁকে ধর্ষণ করেন বছরখানেক আগে, তাঁর নিজের বাড়িতে রাতের বেলায়। এরপর দ্বিতীয়বার তিনি ধর্ষণের শিকার হন গত রোজার ঈদের আগে। একটি নৌকায় নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।’

দ্বিতীয়বার ধর্ষণের সময় দেলোয়ারকে কালাম নামের আরেক যুবক সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই দেলোয়ার ওই নারীকে নৌকায় ডেকে পাঠান। পরে কালামকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন দেলোয়ার।

দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা সেই নারীর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার নারী (৩৭)। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।

এ নিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় মোট ৮জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো বলে জানান পুলিশ সুপার।

 

ছবি: দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ও প্রধান আসামি বাদল

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts