মো. রাসেল হোসেন: ঢাকার মানিকগঞ্জে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পুলিশের হাতে এক সাংবাদিক লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, দুইজনের মধ্যে নিছক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরে ওসির মৌখিক অনুমতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নির্যাতিত ওই সাংবাদিক গভীর রাতে বাসায় ফেরেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির দৈনিক মানবকণ্ঠের সাভার সংবাদদাতা ও অনলাইন রাইজিং বিডির প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা জেলার সাবেক সভাপতি। তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিয়া উজ্জ্বল। এছাড়া অভিযুক্ত আরো দুই পুলিশ সদস্যের পরিচয়া জানা যায়নি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাব্বির বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বন্ধু মাহবুবের বাসায় বেড়াতে যাই। তারা কয়েকজন মিলে রাত ১২টার দিকে বন্ধুর বাড়ির পাশেই দাড়িয়ে গল্প করছিলেন। এসময় কিছু দূরে বন্ধু মাহবুবের এক স্বজনকে পুলিশ জোর পূর্বক থানায় নিয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনা দেখতে পান। পরে ঘটনার বিষয়ে সম্পর্কে জানতে এগিয়ে গেলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা আমার কাছে জানতে চায়, ‘ওই দৌড়াস কেন?’ পরে আমি উনাকে বলি, ‘আপনি তুই তুকারি করে বলছেন কেন?’ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পোশাক পরা আমাকে তুই বললি কেন? আসামি ছিনিয়ে নিতে চাস তুই? বলেই আমাকে ধাক্কা দিতে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বারবার সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরেও আমার শরীরে হাত তুলে লাঞ্ছিত করেন। এসময় দ্রুত এক কনস্টেবল ছুটে এসে আমার পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে আটক করে সিএনজিতে তুলে থানায় ওসি সাহেবের কাছে নিয়ে যান। পরে অবশ্য ওসি পুরো বিষয় শুনে নিজে দুঃখ প্রকাশ করেন। ওসি আশরাফ সাহেব পরে নিজের গাড়িতে আমাকে বাসায় পৌছে দেন।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী মাহবুব আলম বলেন, ‘আরিফ গতকাল আমার এলাকায় ওরশ দেখতে আসছিলো। তখন আমার এক আত্মীয়কে পুলিশ টাইনা হ্যাঁচরাইয়া নিয়া যাইতেছিলো। আমরা ওই দিকেই ছিলাম। কৌতুহলবশত আমরা এগিয়ে গেছি যে, একটা মানুষরে ওই ভাবে টাইনা হ্যাঁচরাইয়া নিয়া যাইতেছে। আমরা জিজ্ঞাস করছি, ওনারে ওই ভাবে নিয়া যাইতেছেন কেন? তার পরেই ওরা আর কি আমাদের সাথে অনেক রুড ব্যবহার করছে। চার জন পুলিশ ছিলো। পরে ওই এএসআই বলছে, অই (আরিফ) আসামি ছিনতাই করতে আসছে, অরে নিয়া চল।’
অভিযুক্ত সাটুরিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিয়া উজ্জ্বল বলেন, ‘রাত ১২টা বাজে ওয়ারেন্টের আসামি ধরতে গেছিলাম। অন্ধকারতো ভাই কিছুইতো দেখা যায় না বুঝঝেন ভাই। ওই সময়তো ও (সাংবাদিক) দৌড়ায় আসতেছে। আমি বলছি, দৌড়ায় আসতেছেন কে আপনি? মানে আমি যে পোশাক পড়া না কি দ্যাহাও যায় না। আমারে বলতাছে যে তুই কেডা? আমি বললাম, আমিতো পুলিশ আসামি ধরতে আইছি। কয় আসামিটা ছাইরা দে তুই। মানে এরকম একটু কথাবার্তা হইছে পরে কইছি যে চলেন থানায় যাই। পরে স্যারের গাড়িতে করে রাতে বাসায় দিয়া আসছি।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাটুরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, রাত্রিতো তখন সাড়ে ১২টা বাজতেছিলো। সে (সাংবাদিক) ভাবছে আসামি জোর করে নিয়া আসতেছে তখন একটু দুইজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হইছে। আমি যতটুকু পারছি দুইজনের সাথে কথা বলে বিষয়টা সলভ করার চেষ্টা করেছি।
মারধর ও লাঞ্ছিত করার বিষয়ে বলেন, ‘আসলেতো ওই রকম না। দুই পক্ষ দুইভাবে বলতেছে আর কি।’