আশুলিয়ায় মনা মার্ডার, কি বলছে স্থানীয়রা!

মো. রাসেল হোসেন, সাভার: আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুন পাড়ায় সম্প্রতি অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শাজাহান খন্দকার মনা নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় আহত হন উভয় পক্ষের আরো অন্তত ৫ জন।

এদিকে, মনা হত্যাকান্ডের পরপরই নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে আশুলিয়ায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭জনকে আসামী করা হয়। পুলিশ সে মামলায় এখন পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন। বাকীদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে এসেছেন এবং আরো কয়েকজন পলাতক রয়েছেন।

তবে, মনা হত্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত না থাকার পরেও তিনি অদৃশ্য কারণে সদ্য বিলুপ্ত ঘোষণা করা আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ টিটু, আশুলিয়া থানা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ অন্তত ৩ জনের নাম মামলায় উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এখনো অনেককে মামলার আসামী করার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন। তার এমন হুমকিতে স্থানীয় হেলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ডেন্ডাবরের ওই এলাকায় একটি ক্লাব তৈরি করে বিভিন্ন সময় আসামিরা গানবাজনা, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতেন। এতে আশপাশের বাসিন্দাদের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় মনা তাদের এসব বন্ধ করতে বলে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারী) আবার গেলে মনাকে মারধর করে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনা।

২১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুন পাড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রবিউল গ্রুপের প্রধান রবিউলের সাথে কথা কাটাকাটি হয় নিহত মনার। এক পর্যায়ে মনা রবিউলকে মারধর শুরু করলে রবিউল গ্রুপের লোকজন জড়ো হয়ে মানার উপর হামলা চালায়। এসময় মনা গ্রুপের লোকজনও পাল্টা হামলা চালালে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্য থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিন রাতেই মারা যান মনা।

স্থানীয়রা বলছেন মনা মার্ডারের পরপর থেকেই এক আতঙ্ক বিরাজ করছে ডেন্ডাবর নতুন পাড়ায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মনা ওরফে মনা পাগলা মূলত একজন মাদক সেবী ও মাদক বিক্রেতা হিসেবেই এলাকায় তার পরিচয় ছিল। মনা ও তার সহযোগীরা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে মাদক সেবন ও বিক্রি করে আসছিল। পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলেন মনা। মনার নামে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়, মনা হত্যাকান্ডের পর থেকে মনার সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এখন ডেন্ডাবর নতুনপাড়া অনেকটাই মাদকমুক্ত বলছেন স্থানীয়রা।

মনা এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি না হলেও মনা তার অধিপত্য খাটিয়ে এলাকায় একটি রিকশাস্ট্যান্ডকে মনার মোড় নামে নামকরণও করেন।

এছাড়া, মনা হত্যাকান্ডের দিন যে রবিউলের নেতৃত্বে মনার উপর হামলায় চালানো হয়েছিল সেই রবিউলকে মনা হত্যা মামলায় আসামী না করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নন এমন কয়েক জনকে আসামী করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। হত্যাকান্ড কাম্য নয় জানিয়ে স্থানীয়রা মনা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের এই হত্যা মামলার আসামীর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্যেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। নির্দোষ ও হয়রানীমূলক আসামীদের মধ্যে রয়েছে সদ্য বিলুপ্ত ঘোষণা করা আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ টিটু, আশুলিয়া থানা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ অন্তত ৩ জনের নাম।

এ ব্যাপারে মনা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজর আলী জানান, নিহত মনার নামে দুটি মাদক মামলা ছিল। তবে সেই মামলাগুলো সবশেষ কি অবস্থায় রয়েছে বা ছিল তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Print Friendly

Related Posts