বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী করোনায় মারা গেলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এর আগে হঠাৎ করে খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হলে করোনার উপসর্গ ভেবে চিন্তায় পড়েন সারাহ বেগম কবরী। পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে নমুনা পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গত ৫ এপ্রিল রাতে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ৭ এপ্রিল রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তরের কথা জানান। তখন এই অভিনেত্রীকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেওয়া কবরী ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শকদের মনে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। অভিনয় জীবনে নায়িকা হিসেবে কবরী শতাধিক সিনেমা করেছেন।
কবরী অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- জলছবি (১৯৬৫), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৫), বাহানা (১৯৬৮), আবির্ভাব (১৯৬৮), বাঁশরি (১৯৬৮), যে আগুনে পুড়ি (১৯৬৮), দ্বীপ নেভে নাই (১৯৭০), দর্প চূর্ণ (১৯৬৮), ক খ গ ঘ ঙ (১৯৬৮), বিনিময় (১৯৬৮), লালন ফকির (১৯৭৩) তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), রংবাজ (১৯৭৩) মাসুদ রানা (১৯৭৪) সবিতা (১৯৭৪), সুজন সখী (১৯৭৫), সাধারণ মেয়ে (১৯৭৫), গুন্ডা (১৯৭৬) নীল আকাশের নিচে (১৯৭৬) ময়নামতি (১৯৭৬) আগন্তুক (১৯৭৬), আঁকাবাঁকা (১৯৭৬), কত যে মিনতি (১৯৭৬), অধিকার (১৯৭৬), স্মৃতিটুকু থাক (১৯৭৬), সারেং বৌ (১৯৭৮), বধূ বিদায় (১৯৭৮), আরাধনা (১৯৭৯), বেইমান (১৯৭৯), অবাক পৃথিবী (১৯৭৯), কাঁচ কাঁটা হীরা (১৯৭৯), উপহার (১৯৭৯), আমাদের সন্তান (১৯৭৯), মতিমহল (১৯৭৯), পারুলের সংসার (১৯৭৯), অরুণ বরুণ কিরণমালা (১৯৭৯), হীরামন (১৯৭৯), দেবদাস (১৯৭৯),আমার জন্মভূমি (১৯৭৯) এবং দুই জীবন (১৯৮৭)।
এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে বিশ্বখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে অভিনয় করেন বেশ আলোচিত হন। এছাড়া নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছাড়িয়ে যায় আগের সব জনপ্রিয়তাকে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা সামনের দিকে। তার অন্যান্য জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী।
অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন কবরী।
অভিনেত্রী কবরী পরিচালনায় নাম লিখিয়েছিলেন ২০০৮ সালে।নির্মাণ করেছিলেন ‘আয়না’ নামের সিনেমা। এরপর সর্বশেষ হাত দিয়েছিলেন আরও একটি সিনেমার কাজে। সরকারি অনুদানের এই সিনেমার নাম ‘এই তুমি সেই তুমি’।
ছবির বেশ কিছু অংশের শুটিং শেষ করেছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিনকে দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন গানও। কিন্তু সেই সিনেমা অসম্পূর্ণ রেখেই চিরবিদায় নিলেন কবরী। অসম্পূর্ণ থেকে গেল কিংবদন্তি অভিনেত্রীর অনেক স্বপ্নও।