বরগুনায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে কাজ না করে অর্থ লোপাট

ইফতেখার শাহীন: ২০২০-২১ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) এর আওতায় ১ম পর্যায়ের বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের অধীনে বরগুনা সদর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে সর্বমোট ১১৬৭ জন অতিদরিদ্রের জন্য ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পকে ঘিরে বরগুনায় পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এ প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দকৃত অর্থ চলে গেছে পকেটে পকেটে, এমন অভিযোগ এলাকার একাধীকজনের।

বরগুনা সদর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রকল্পে নির্দিষ্ট ৪০ দিন অনুযায়ী অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ হয়নি। এতে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অতিদরিদ্র অনেক নারী ও পুরুষ। সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সম্পূর্ন বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টজনরা। দৈনিক হিসেবে কাজ করানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন প্রকল্পে লোক দেখানো যাওবা কাজ হয়েছে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে অন্য এলাকা থেকে ঠিকা চুক্তিতে কাজ করানো হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

সদর উপজেলার বরগুনা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চাঁদের হাট ব্রীজ হতে পশ্চিম দিকে ওয়ারেচ আলী হাওলাদার বাড়ির কালভার্ট পর্যন্ত মাটির রাস্তা পূন:নির্মান প্রকল্পে ৬৯ জন শ্রমিকসহ ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরেজমিনে দেখা যায় এ প্রকল্পে কাজ হয়নি। ওই একই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউনুচ মাষ্টারের বাড়ি হতে পশ্চিম দিকে টুনু মিয়ার বাড়ি হয়ে পৌরসভার সীমানার কালভার্ট পর্যন্ত মাটির রাস্তা পূন:নির্মান কাজে শ্রমিক সংখ্যা ২৫ জন ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ। এলাকার আবদুস সালামের কাছ থেকে জানা যায়, এ প্রকল্পে কাজ হয়েছে মাত্র ৩ দিন। ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ২ দিন ও ভেকু দিয়ে ১ দিন কাজ হয়েছে ঠিকা চুক্তিতে।

আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নে ৭ নং ওয়ার্ডের বৈকালিন আবাসনের স্লূইস গেট হতে নুরুল ইসলাম চৌকিদার বাড়ির কালভার্ট পর্যন্ত মাটির রাস্তা পুন:নির্মান। এ প্রকল্পে শ্রমিক ৩৪ জন ও ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, এ প্রকল্পে ২০ দিন ১৪/১৫ জন শ্রমিক দিয়ে ১’শ ফুট ২ হাজার ৮ শত টাকা দরে ঠিকা চুক্তিতে কাজ হয়েছে।

এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে ৫নং ওয়ার্ডের মনসাতলী খলিফা বাড়ি সংলগ্ন স্লূইজ গেট হতে উত্তর দিকে সিদ্দিক খাঁনের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা পুণ: নির্মান প্রকল্পে ৪৫ জন শ্রমিক এবং ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ। সিপিসির নির্দেশে মনসাতলীর বাসিন্দা যাকে দায়িত্ব দিয়ে এ প্রকল্পের কাজ করানো হয়েছে মোঃ শাহ আলম মিয়ার কাছ থেকে জানা যায়, ২৫ জন শ্রমিক দিয়ে ১ চেইন (১’শ ফুট) ৮ হাজার টাকা দরে ঠিকা চুক্তিতে ১১ দিন ১১ চেইন কাজ হয়েছে। শ্রমিক যারা এ প্রকল্পে কাজ করেছে তাদের বাড়ী অন্য এলাকার মাইঠা গ্রামে।

উপজেলার ফুলঝুরি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছোট গৌরীচন্না বামনের খালের গোড়া হতে উত্তর দিকে নুরু মুসুল্লী বাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা পুণ:নির্মান। এ প্রকল্পে শ্রমিক সংখ্যা ৩৬ জন এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। শ্রমিক সর্দার ইউনুস মিয়া জানান, এ প্রকল্পে কাজ হয়েছে ৩৫/৩৬ দিন। শ্রমিক সংখ্যা কোন দিন ৭ জন, উর্ধ্বে ১৫ জন কাজ করেছে এ প্রকল্পে। অধিকাংশ ইউনিয়নের প্রকল্প ঘুরে একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

জানতে চাইলে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা মোঃ ওয়ালি উল ইসলাম বলেন, কাজ সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এবং শ্রমিকদের বিল তাদের নিজস্ব একাউন্টে দেয়া হয়েছে। যদি অভিযোগ থাকে তাহলে ইউএনও স্যারের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা আক্তার বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts