বৃহত্তর খুলনা সমিতি, ঢাকার মানববন্ধন

খুলনাঞ্চলের উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণই সমাধান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের উপকূল এলাকায় ঘুর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেড়ে গেছে। এখানকার জনজীবন আজ বিপর্যস্ত প্রাণহানির ঘটনাও অহরহ ঘটছে। নদীর বাঁধ ভেঙে নোনা পানিতে উপকূল এলাকা প্রায়শঃ প্লাবিত হচ্ছে। সারাবছর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে; ভেঙে পড়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান ব্যবস্থা। উপকূলের অর্থনীতির ভঙ্গুর চিত্র উঠে আসছে। অতি সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের লেজটা ছোঁয়া দিয়ে গেছে বাংলাদেশের উপকূলে। তাতেই জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট উচ্চতায় উঠে যায়। এতে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো সুন্দরবন ডুবে গেছে। বাদ যায়নি কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিনও। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে জীবনবৈচিত্র্য, মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলসহ নানা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুতরাং উপকূলবাসীকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণেই সমাধান দেখছেন অভিজ্ঞজনেরা।

বুধবার (২ জুন) রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ঢাকাস্থ বৃহত্তর খুলনা সমিতি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা সমিতির নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিআকর্ষণ করে যতোদ্রুত সম্ভব স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ এবং জলবায়ু তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে উপকুলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।

বৃহত্তর খুলনা সমিতি, ঢাকার সভাপতি, সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, সমিতির সহ-সভাপতি সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মনিরুজ্জামান, তালা উপজেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সাতক্ষীরা জেলা সমিতির ট্রেজারার এবং বৃহত্তর খুলনা সমিতির প্রচার সম্পাদক রেজাউল হক রেজা, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাফেজ সুলতান আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোঃ শামসুজ্জামান, মোঃ আমজাদ হোসেন , মোঃ আসাদুল্লাহিল গালিব, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, তালা উপজলো সমিতির সভাপতি এম এ গফুর, পাইকগাছা সমিতির সভাপতি একেএম সাঈদ হোসেন প্রমুখ ।

ঢাকাস্থ বৃহত্তর খুলনা সমিতির উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় ঘুর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহাণি ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মানববন্ধনে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে বন্যা ও জলোচ্ছাস ইদানীং ঘন ঘন হানা দিচ্ছে। ফলে স্থানীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস সম্পদসহ কৃষি অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য উপকূলের নদীতে কার্যকর ড্রেজিংসহ স্থায়ী বাঁধ দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি; উপকূলবাসীর জীবন মরণ সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ উদ্যোগ উপেক্ষিত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যুহ সুন্দরবন আজ বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত। জলোচ্ছাসে মৃত হরিণ ভেসে আসার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা আগে ঘটে নাই। সুন্দরবনের সাথে অসুন্দর ব্যবহারের মাশুল দেওয়া শুরু হয়েছে। এক ঘুর্ণিঝড় থেকে পরের ঘূর্ণিঝড়ের সময়গত দূরত্ব কমছে। বাড়ছে বন্যা-জলোচ্ছাস। দুর্যোগের পরপরই প্রতিশ্রুতির পাহাড় যা দিনকয়েক পরেই পথ হারায়, তার বাস্তবায়নের দেখা মেলে না। আরেকটি ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করার পর আবার সবাই সাময়িকের জন্য জেগে ওঠেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এভাবে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারেনা একটি সমৃদ্ধ সম্ভাবনার অর্থনীতি, জনপদ. জনসম্পদ। ঢাকায় বসবাসরত সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাটের (যেখানে আমাদের নাড়ি পোতা) উপকূলের মানুষ হিসেবে আমরা দূর্গতদের সাথে আছি, পাশে আছি । এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দুর্যোগে আমরা উদ্বিগ্ন।

Print Friendly

Related Posts