মো. রাসেল হোসেন,ধামরাই: ঢাকার ধামরাইয়ে হঠাৎ করে চুরি বেড়ে গেছে। হরহামেশা দিনে দুপুরেও চুরি হচ্ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে দিনে দুপুরে পৌর শহরের কয়েকটি মহল্লায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি জুন মাসে পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় চুরির ঘটনা ঘটেছে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ টি। শুধু চুরি নয়, এ জুন মাসেই জয়পুরা এলাকাতে রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। এসময় ডাকাতরা নগদ ৩ লাখ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল সেট লুট করে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন দক্ষিণ পাড়া মহল্লা সাংবাদিক বকুল ও সাংবাদিক মাসুদের বাসায়ও দুপুর তিনটার দিকে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান বকুল বলেন, সকালে সংবাদ পাই ধামরাই থানাতে ইয়াবাসহ দুইজন আটক হয়েছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে ধামরাই থানায় যাই। বাসায় এসে শুনি আমার মেয়ের বাইসাইকেল চুরি হয়ে গেছে। তাও আবার সকাল ৮ টার দিকে। এ নিয়ে হতাশ হয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই।
সাংবাদিক বকুল বলেন, আমার নিজের একটা মোটর সাইকেল আছে যদি সেটাও চুরি হয়ে যেতো আমি এতটা দুঃখ পেতাম না, যেটা সাইকেল চুরি হওয়ার পর পেয়েছি। তার কারণ আমার মেয়ের খুব শখের সাইকেল ছিল। সেটা আমি কিনে দেই নাই, উপবৃত্তির টাকা জমিয়ে এই সাইকেলটি কিনেছিল আমার দুই মেয়ে। আর সেটা কিনা দিনে দুপুরে চুরি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ধামরাইয়ে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, সেই সাথে বেড়েছে মাদক বেচাকেনা। যার কারণে দিনে দুপুরে চুরি হচ্ছে। আমার বাসার পাশেই প্রতিনিয়ত চলে মাদক কেনা বেচা ও সেবন। এ নিয়েও আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।
সাংবাদিক মাসুদ বলেন, আমার ছোট ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেই সুযোগে আমার বাসায় চুরি হয়।বাসায় এসে দেখি আমার মূল দরজার ও রুমের তালা ভেঙ্গে আমার ওয়াডড্রবে রাখা ৪০ হাজার টাকা ও আমার স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণের অলংকার চুরি হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আমার বাসার নিচ তলা ও তিন তলায় একই দিনে চুরি হয়েছে। নিচ তলার অপু ভাইয়ের রুমের তালা ভেঙ্গে সনি ব্র্যান্ডের ৪০ ইঞ্চি এলইডি রঙ্গিন টিভি ও ৭ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আর তিন তলার হারুন ভাইয়ের বাসায় তালা ভেঙ্গে ১৫ হাজার নগদ টাকা এবং রুমে থাকা আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। আমি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে থানায় অভিযোগ দায়ের করি। সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন আসামি ধরতে পারেনি ধামরাই থানা পুলিশ।
শুধু নতুন দক্ষিণ পাড়া মহল্লায় নয়, চুরি হয়েছে ধামরাই কোর্ট পাড়া মহল্লায় নুরুজ্জামান নামে এক স্কুল শিক্ষকের বাসায়। সেটি হয়েছে সকালে । স্কুল শিক্ষক জানান, ১২ জুন রাতে আমার বাসায় চুরি হয়েছে। সকালে উঠে দেখি আমার মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে। এনিয়ে ধামরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছি। এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান পেলাম না।
এছাড়াও জুন মাসের গত ১৪ তারিখে ধামরাই পৌরশহরের হুজুরীটোলা মহল্লার বাবু মিয়ার বাসার সামনে থেকে তার ভাগ্নের দিনে দুপুরে মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ধামরাই পৌরবাসী বলেন, যে হারে দিনে দুপুরে পৌর শহরের পাড়া মহল্লায় চুরি হচ্ছে তাতে বাসা থেকে কোথাও যেতে ভয় লাগছে। চুরি বাড়বে না কেন ধামরাই এখন মাদকে ভরপুর। সহজে মাদক কেনা বেচা যায়। সেই মাদক কেনার জন্য দিনে দুপুরেই এই চুরিগুলো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আতিকুর রহমান বলেন, ধামরাই পৌর শহরে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কাছে এর অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। আমরা চুরির ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। আসামি গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটা বন্ধ হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে সে জন্য সাদা পোশাকে আমাদের পুলিশ দিনে রাতে কাজ করছে।