ফাইজুল ইসলাম
তিনি বইপ্রেমিক। বইকে দেখেন সন্তানের মতো। দুই/তিনটি বই লিখেছেন। তবে আজীবন কোয়ালিটি সম্পন্ন বই সংগ্রহ করেছেন। যেখানে ও যেভাবে যা পেয়েছেন এই মণি-মুক্তা বাসায় নিয়ে এসেছেন। নিজে পড়েছেন ও আগলে রেখেছেন এতদিন। এ যেন তার যক্ষের ধন। এখন তার বয়স আশির কাছাকাছি। স্মৃতি শক্তি মন্দ নয়। কিন্তু বেশিক্ষণ পড়তে পারেন না, মাথা ধরে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেষ বয়সে তার মূল্যবান বইগুলি বিলিয়ে দেবেন তিনি। কিছু দিন আগে তার ফোন পেয়ে সপরিবারে তার বাসায় যাই। সারাদিন থেকে বই বাছাই করি। এরপর আড়াই শতাধিক বই নিয়ে রাতে বাসায় ফিরি।
আমার আগে আরো কয়েকজন তার পারিবারিক লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে গেছেন। তারপরও আমি যে সব বই নিয়ে এসেছি তা মহামূল্যবান। তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পেরে গর্বিত। এই রুচিশীল বই পড়ুয়া মানুষটি অমায়িক ও আন্তরিক। এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম নায়ক হলেও অনালোকিত ও অনালোচিত।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। যার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা সংগ্রাম বেগবান হয়। তিনি তখন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র। ক্লাসমেট ওহিদুর রশিদ মুরাদের সঙ্গে ডিগ্রি পাসকোর্সর শিক্ষাবর্ষ কমানো, কয়েকটি বই সিলেবাস থেকে বাতিল প্রভৃতি দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ঢাকা কলেজ ও নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে ডাকসুর মাধ্যমে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
এই আন্দোলনে জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ভিপি আমানুল্লাহ ওয়ারেসি, কাজী আরিফ, ডাকসু নেতৃবৃন্দ-ভিপি রফিকুল হক, সেক্রেটারি এনায়েতুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, কাজী জাফর, রাশেদ খান মেনন প্রমুখ একসময় এই আন্দোলনকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের রূপ দেন। শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র ইউনিয়নের ভিত শক্তিশালী হয়। তবে আলোচ্য মহান পুরুষ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ছাত্র লীগে যোগদান করেন এবং ঢাকা শহরে ছাত্র লীগকে সংগঠিত করেন। হিন্দু শিক্ষার্থী ও ছাত্রীদের সম্পৃক্ত করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের কারণ তার দুই বছর লস হয়।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক পূর্বদেশে সাবএডিটর হিসেবে যোগদান করেন। এখানে রিপোর্টার ও সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৫ সালে ইত্তেফাকে যোগদান করেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে।
২০০৬ সালে আমি যখন ইত্তেফাকের এডিটরিয়াল বিভাগে জয়েন করি, তখন এক বছর তার সান্নিধ্যে আসি। তিনি আর কেউ নন, মোস্ট সিনিয়র সহকর্মী জিয়াউল হক। ঐদিন তার বাসায় না গেলে এ দেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতার অনেক কিছুই জানতে পারতাম না। সদালাপী ও ক্রীড়ামোদী জিয়াউল হক ভাই শতায়ু লাভ করুন।