বিজয় ধর: রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন সাজেকের দুঃখ ম্যালেরিয়া। এই বিপদটি যেন পিছু ছাড়ছে না এখানের মানুষের।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২৩ হাজার ২০৫ জনসংখ্যার সাজেকে ২০১৯ সালে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫৬ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৭৮ জন ও ২০২১ সালের অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারি- জুন পর্যন্ত ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬ জন।
দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই,বেটলিং, অরুন পাড়া এসব এলাকাতেই ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি।
সাজেকের ৯নং ওয়ার্ডের শিয়ালদাই পাড়ার বাসিন্দা বৈজন ত্রিপুরা বলেন, আমার পরিবারের তিনজন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এখন সবাই সুস্থ আছে।
সাজেক ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য জৈপুথাং ত্রিপুরা বলেন, আমি নিজেও গত মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি। পাশাপাশি আমার পরিবারের অনেকে আক্রান্ত ছিল। তিনি বলেন, সাজেকে এ বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ১শ জনের মতো মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগী হিসেবে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য মতে, ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ৬৭ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় ৪৯ জনের।
ব্র্যাকের হিসাব মতে, গত ২০১৯ সালে ২৮ হাজার জনের রক্ত পরীক্ষা করে ১৩০৬ জনের এবং গত বছর ২০২০ সালে ২৮৬৬৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ২৮৯ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে।
সাজেক ইউপি সচিব বিশ্বজিৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রতিবছরই সাজেকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়।কিন্তু অন্যান্য বছরেরও তুলনায় এবার এখনো কম আক্রান্ত হয়েছে। তবে প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফেতেকার আহমদ জানান, ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে সাজেক অনেক আগে থেকে রেড জোনে ছিল। এখানে নতুন করে কোন রেড জোন ঘোষণা করা হয়নি। জুন পর্যন্ত ৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলো, এরা বর্তমানে সুস্থ আছে।
তিনি বলেন, এখানে সরকারি এবং বেসরকারি ২শ জন কর্মী ম্যালেরিয়া ও যক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে আসছে।
তিনি আরো বলেন, সাজেকে প্রতিবছর ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে ।
ডা. ইফতেকার আহমদ বলেন, বর্ষার সময় সাজেকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপটা বেশি বেড়ে যায়। এখানে বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষ মশারি টাঙিয়ে ঘুমায় না, এর থেকে আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ে। পুরো বাঘাইছড়ি উপজেলায় আমরা এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার মশারি বিতরণ করেছি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই সাজেকে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় । এ বছর তুলনামুলক ভাবে অনেক কম। তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে এবং ম্যলেরিয়া পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কীটও রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় কেউ মারা যায়নি।