ভাল নেই বাক প্রতিবন্ধী পত্রিকা বিক্রেতা আনিসুর রহমান

খান মাইনউদ্দিন,বরিশাল : দুপুর সাড়ে বারোটা। বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বিবির পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় চোখে পড়ল- নিজের পত্রিকা বিক্রির দোকানে বিষন্ন মনে অলস বসে আছেন বাকপ্রতিবন্ধী পত্রিকাবিক্রেতা আনিসুর রহমান।

তার ছোট্ট এই দোকানে বসেই গত ৩০ বছর যাবত সকল জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা বিক্রি করেন তিনি। একসাথে সব পত্রিকা এই দোকানে পাওয়া যায় বলে- অনেকেই পত্রিকা ক্রয়ের জন্য চলে আসেন তার কাছে। সে কারণে পত্রিকা বিক্রির জন্য বরিশালে ব্যাপক পরিচিত বাক প্রতিবন্ধী এই বিপণনকর্মীর।

২০০৭ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে তার ‘কাঠের তৈরি নিজের পত্রিকার দোকানটি’ ঝড়ের তোড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে শহরের বিবির পুকুরের মধ্যে গিয়ে আছড়ে পড়ে। তখন তার ওই অসহায় সময়ে দৈনিক নয়াদিগন্ত ত্রাণ তহবিলের সহায়তায় তাকে লোহার তৈরি একটি পত্রিকা বিক্রির স্টল করে দেয়া হয়। সেখানে বসে আজো পত্রিকা বিক্রি করেন তিনি। কিন্ত করোনার এই কঠিন সময়ে চরম অর্থসঙ্কটে রয়েছেন তিনি। পত্রিকা কেনার গ্রাহক অনেক কমে গেছে। মানুষ ঘরবন্দী থাকায় সারাদিনেও আগের মতো পত্রিকা বিক্রি হয় না তার।

এই প্রতিবেদককে দেখে আকারে ইঙ্গিতে তার চলমান সঙ্কটের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। অবশেষে লিখে তার সাথে অনেকক্ষণ কথোপকথন হলো। বাকপ্রতিবন্ধী হলেও সকল লেখা পড়তে ও বুঝতে পারেন তিনি। আমার লেখা প্রশ্নগুলোর উত্তরে তিনি লিখে জানালেন- আগে প্রতিদিন তার দোকানে যে পরিমাণ পত্রিকা বিক্রি হতো এখন তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে এখন আর তার সংসার চলে না। প্রতিদিন সকালে তার পত্রিকার দোকান খোলার আগে তিনি বেশ কয়েকজন গ্রাহকের বাসা ও অফিসে পত্রিকা সরবরাহ করতেন, ওই নিয়মিত গ্রাহকদের অনেকেই এখন পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে করোনার এই সময়ে চরম অর্থসঙ্কটে চলছে তার দিনকাল।

শুধু আনিসুর রহমানই নন, তার মতো বরিশাল নগরীর শত শত পত্রিকা বিক্রেতা এখন মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন। বরিশাল সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. নেছার জমাদ্দার বলেন, মানুষ এখন পেপার পড়া কমিয়ে দিয়েছে, তারা বলছে- অধিকাংশ পেপারে যে খবর ছাপা হয় তা আগের দিনই আমরা অনলাইনে ও টিভিতে পেয়ে যাচ্ছি। ইদানিং করোনার অজুহাতে অনেকে পেপার রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে আমাদের পেপার বিক্রি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। পত্রিকার বিপণনকর্মীদের এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে সরকারের সহায়তা আবশ্যক। নচেৎ পরিবার নিয়ে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

Print Friendly

Related Posts