ডা. জাহেদ পারভেজ
চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ১০০টির ও বেশি চুল পড়ে। তবে করোনায় সেরে উঠার পড়ে কিন্তু বেশ চুল পড়ে কারো কারোর তবে অনেক বেশি হারে চুল পড়তে শুরু করলে তা কিন্তু দুশ্চিন্তার ব্যাপার। তখনই এর চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
*চুল পড়ার মুল কারণ:
অস্বাভাবিক হারে চুল হারানোর কারণ মূলত দুটি- বংশগত ও বয়সজনিত। বংশগত বা জেনেটিক কারণে চুল পড়ার ক্ষেত্রে হরমোন দায়ী। এ ছাড়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলো সংকুচিত হয়ে যায় বা চুলের বৃদ্ধিচক্র সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ফলে চুল গজানোর হারের চেয়ে পড়ার হার বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশন চুলের ফলিকলগুলো বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি পর্যায় সংক্ষিপ্ত করে। এতে চুল লম্বা ও ঘন হয়। এ ছাড়া এ পদ্ধতি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। মিনোক্সিডিল একটি ড্রপার বা মিক্স, যা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়। মিনোক্সিডিল টাকের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্তু এটি ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় লক্ষ করতে হবে। যেমন আপনার পরিবারের অথবা বংশের কোনো পুরুষ-নারীর চুল পড়া বা টাকের সমস্যা আছে কিনা। তবে ইদানীং করোনা সংক্রমণের কারণে চুল পড়া বা বয়সজনিত বা অন্য কোন কারণে গোসলের সময়, বালিশে অথবা চিরুনিতে আগের চেয়ে বেশি চুল পড়ছে কিনা। মাথায় আক্রান্ত স্থানে ড্রপার দিয়ে এক মিলিলিটার করে অথবা ৮ থেকে ১০টি স্প্রে দিয়ে দিনে দুবার সলিউশনটি প্রয়োগ করতে পারেন। এটি ব্যবহারে তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কেউ কেউ মাথার তালুতে আলতো চুলকানিজনিত অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। সাধারণত সলিউশনটি ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ব্যবহার করা উচিত নয়।
*করোনায় চুল পড়ায় দুশ্চিন্তা নয় :
করোনার সাথে লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষ। পৃথিবীজুড়ে করোনা তার ভয়াল সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছে। নানান বিধিনিষেধ মেনে চলার পরেও কোভিডের মুখোমুখি হচ্ছেন অগণিত মানুষ। লড়াই করে সুস্থ হওয়ার পরেও শরীরে থেকে যাচ্ছে বিভিন্ন জটিলতা। তার মধ্যে অন্যতম চুল পড়ার সমস্যা।
*সমাধান:
বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর কিছু চুল ঝরে যাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়টি তখনি চিন্তার কারণ হয় যখন মাত্রাটি অস্বাভাবিক হয় পড়ে। কোভিড থেকে সেরে উঠার পরও তার রেশ শরীরে নানান ভাবে থেকে যায় অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস। সাধারণত, কোভিডের পর সর্তক থাকতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা, মনের য্ত্ন এবং খাওয়া-দাওয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে।
করোনা সংক্রমণের পর থেকে দুই মাস চুল পড়তেই পারে। এটাকে বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। চুলের স্বাভাবিক বেড়ে উঠা বা ঝরে পড়ার প্রক্রিয়াটাতে ব্যাঘাত ঘটায়, অন্য রকম করে দেয়। ফলস্বরূপ চুল পড়তে থাকে আর উদ্বিগ্ন হতে থাকি আমরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন চুল পড়ে এবং এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়।
প্রথমেই একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। আমাদের চুলের কোষ বা ফলিক্লগুলোর তিনটি পর্যায় আছে। চুল সুস্থ থাকলে অ্যানাজেন, বৃদ্ধি কমে গেলে টেলোজেন এবং চুল পড়ার পর্যায়টাকে বলে ক্যাটাজেন। সাধারণত সুস্থ যে কারোর মাথার চুলের ৮০ শতাংশ অ্যানাজেন।
যেকোনো অসুস্থতার প্রভাব চেহারায় ছায়া হয়ে দেখা দেয়। তখন মানুষ বিব্রত হন। সেই স্ট্রেস থেকেও চুল পড়া বেড়ে যায়। তখন অসুস্থতা থেকে সেরে উঠা ব্যক্তিকে কাউন্সিলিং করতে হবে। বুঝাতে হবে তার চুল ঝরার বিষয়টি সাময়িক। ক’দিন পর ঠিক হয়ে যাবে। যদি স্ট্রেস বাড়তেই থাকে তাহলে চুলও পড়তে থাকবে। এজন্য বলা হয়, যত দুশ্চিন্তা তত চুল পড়ে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়া ও নিয়মিত শরীর চর্চা, সময় মতো ঘুমালে, জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার কমালে এই সমস্যা অনেকটা মিটে যায়। কোভিডের পর শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালশিয়াম কমে যায়। চিকিৎসকরা তখন কিছু মাল্টি ভিটামিন ওষুধ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন।
চুলের জন্য প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালশিয়াম খুব দরকারি। কোভিডের পর শরীরে ভিটামিন ডি কমে যায়, তাই নির্দিষ্ট সময় রোদে থাকাতে পারেন। সেটা বাড়ির ছাদ বা বারান্দা দুইটাই হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাল্টি ভিটমিন ও প্রোবায়োটিকের কিছু ওষুধ খেতে পারেন। এসময় ব্যালেন্সড ডায়েট খুব জুরুরি। কম তেল-মশলা দেওয়া খাবার কোভিড সেরে যাওয়ার পরও খেত
কোভিড থেকে সেরে উঠর পর অতিরিক্ত স্ট্রেস নেওয়া যাবে না।ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এমনকি চিকেন পক্সের পরেও চুল পড়ে থাকে। সবসময় মনে রাখতে হবে বিষয়টি সাময়িক। আর কোবিডের সাথে লড়াই করে যে জয়ী হতে পারে তার কি অযথা দুশ্চিন্তা করা মানায়! তাই সুস্থ থাকতে ভেঙে পড়া চলবে না। কারণ, কোভিডকে পরাজিত করে এগিয়ে যাওয়ার নামই তো জীবন।
* সাময়িক যা করবেন:
প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুবার মাথায় ত্বকের উপরিভাগে চুলের হারানো অংশে সলিউশনটি প্রয়োগ করুন। রাতে ঘুমানোর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই এটা ব্যবহারের আগে ভালো করে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার ফল পেতে চার মাস সময় লাগে। মিনোক্সিডিল ব্যবহারের একটি লক্ষণীয় দিক হলো- রোগী নিজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, এটা কাজ করছে কিনা। সলিউশন ব্যবহারের দুসপ্তাহের মধ্যে চুল পড়া কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে, চুলের নতুন বৃদ্ধি পর্যায় শুরু হয়ে গেছে এবং পুরনো চুলগুলো নতুন চুল জায়গা করে দিচ্ছে। এর কিছুদিনের মধ্যে, অর্থাৎ চার মাস ব্যবহারের পরই নতুন চুল গজাতে থাকবে।
*বংশগত টাক:
যাদের বংশগত টাক রয়েছে, তাদের নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়মিত ও রুটিনমাফিক ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে। মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশন ব্যবহার করার পর কোমল ও সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। এমনকি আপনি চুল রঙও করাতে পারবেন।
* শৈল চিকিৎসা :
চুল পড়া রোধে সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে, মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশনের সঙ্গে পিআরপি (প্লাটিলেট-রিচ প্লাজমা) থেরাপি নেওয়া। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সবকিছু করতে হবে। নিজে থেকে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার সব চিকিৎসা সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।করোনান পরবর্তী চুল পড়লে বা অন্য কোন কারণে তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলাই উচিত।
ডা. জাহেদ পারভেজ: (হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ) সহকারী অধ্যাপক, জাহেদ হেয়ার এন্ড স্কিনিক। সাবামুন টাওয়ার, পান্হপথ মোড়, ঢাকা।
০১৭০৭-০১১-২০০, ০১৭৩০-৭১৬-০৬০