নবীনগরে ঘরে ঘরে সর্দি জ্বর: দোকানে প্যারাসিটামল নেই, ওষুধের জন্য হাহাকার

জ.ই বু্লবুল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় দিন দিন করোনা উপসর্গ রোগীর সংখ্যা ভয়ানক রুপে বেড়েই চলছে, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে পাড়া-মহল্লায়। ঠাঁই হচ্ছেনা সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।

এদিকে প্রতিদিন ঠাণ্ডা জ্বর সর্দি মাথাব্যথা গলা ব্যথা এইসব উপসর্গের কারণে নবীনগরে ওষুধের চাহিদা বেড়েও গেছে বহুগুণ। মহাসংকটে পড়েছেন ক্রেতারা। বিপাকে পড়েছেন ওষুধ বিক্রেতারাও। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে চাহিদার কথা জানিয়ে অর্ডার করেও ওষুধ পাচ্ছেন না।
ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। বিপদগ্রস্ত রোগীর আত্মীয়-স্বজনরাও ওষুধ সংগ্রহের জন্য ছুটছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ঢাকায়ও। অতিরিক্ত দামে ওষুধ সংগ্রহ করছেন কেউ কেউ । ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার কাইতলা, শিবপুর, বিদ্যাকুট, মিরপুর, ওয়ারক, জুলাইপাড়া, সলিমগঞ্জ, বাঙ্গরা, জিনোদপুর, আহমদপুর, বাড়িখলা, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন চরলাপাং, নবীপুর, আলমনগর, রসুল্লাবাদ, ভোলাচং, ভেলানগর, বীরগাঁও, বাইশমোজা, গাছতলা, বরিকান্দি, শ্যামগ্রাম বাজারে ওষুধের ফার্মেসিগুলোতে জ্বর ঠান্ডা সর্দি কাশি গলা ব্যথা মাথা ব্যথা সব রোগের ওষুধ সংকট রয়েছে।

যেমন: ফেক্সোফেনাডিন, এজিথ্রোমাইসিন, মন্টিলুকাস্ট ১০, প্যারাসিটামল ৫০০, নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, এক্সপা, এক্সপা এক্সআর, মোনাস টেন, ফেনাডিন ১২০, নাপা সিরাপ, জিংক বি, এসব ওষুধের সংকট রয়েছে বাজারগুলোতে।

এ ব্যাপারে ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি দশ বারোটা ফার্মেসি ঘুরেছি প্যারাসিটামল জাতীয় কোন ওষুধ খুঁজে পাচ্ছিনা। আমাদের ঘরে বাচ্চাসহ প্রায় সবারই জ্বর সর্দি ঠান্ডায় ভুগতেছি।

ছবি: নবীনগর সদর লঞ্চঘাট মা ফার্মেসিতে জ্বরের ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে দেখা যাচ্ছে।

ওষুধ ক্রেতা কবির আহমেদ ও সাব্বির জানান, ঘরের সবাই ঠান্ডা জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে গ্রামের বাজারে ওষুধ না পেয়ে নবীনগর আসছি লকডাউনে অনেক কষ্ট করে। কয়েকটা ওষুধ এখানেও পাইনা।

কথা হয় রোগীর আত্মীয় মিলাদ হোসেন এর সাথে। তিনি বলেন, আমার চাচা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রেসক্রিপশন অনুসারে কিছু ওষুধ পাচ্ছিনা। এখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি বিকল্প কোন ব্যবস্থা আছে কিনা।

কথা হয় করোনা উপসর্গ নিয়ে ওষুধ কিনতে আসা মোহাম্মদ হাফিজ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমি নিজেই করোনার উপসর্গ নিয়ে ওষুধ খুঁজে পাচ্ছিনা। প্যারাসিটেমল জাতীয় কয়েকটা ওষুধ কিনেছি। ২০ টাকার পাতা ৫০ টাকায় পাইছি। এতেও আলহামদুলিল্লাহ।

এদিকে বিক্রেতা ডাক্তার শান্তি ক্লিনিক এন্ড ফার্মেসির মালিক নবীনগর বাজার ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুবীর রঞ্জন সাহা বলেন, টপ টুয়েন্টি কোম্পানির প্যারাসিটামল ওষুধ যে জিনিস দিয়ে তৈরি হয়। এটাই আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে আসতেছে না লকডাউন এর কারণে। যে কারণে কোম্পানিগুলোই উৎপাদন করতে পারছে না। একারণে বাজারে সংকট। গত দেড় মাস ধরেই সাপ্লাই দিচ্ছে না।

এদিকে নবীনগর বাজারের মা ফার্মেসির মালিক সুমন দত্ত জানান, নবীনগরে অবস্থা ভালো না হঠাৎ করে করোনার কারণে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে।

এদিকে ভৌমিক ফার্মেসির মালিক প্রবীর ভৌমিক বলেন, আমরা চাহিদার কারণে কুমিল্লা ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে বেশি দামে কিছু কিছু ঔষধ কিনে বিক্রি করার চেষ্টা করছি। তারপরও মার্কেটে ওষুধের জন্য হাহাকার।

এদিকে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এসময়ে প্যারাসিটামল গ্রুপটার একটু সংকট। কারণ হিসেবে আমাদের ম্যানেজমেন্ট বলছে আমাদের প্রোডাকশনের যে ক্যাপাসিটি তার তুলনায় মার্কেটের ডিমান্ড বেশি। আমরা জুলাই মাসের প্রথম থেকে মাল সংকটে ভুগছি কবে নাগাদ উৎপাদন বাড়াবে আমরা সেটা দিন তারিখ বলতে পারছি না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই আশা করি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।

এদিকে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার তোফায়েল চৌধুরী বলেন, সবার একই অবস্থা। মূল কথা হলো আমাদের ইয়ারলি একটি বাজেট থাকে যেমন আমাদের বছরে এক কোটি বক্স দরকার। কোম্পানি তৈরি করেছে। এখনকার যে পরিস্থিতি দেখা গেছে সবারই প্যারাসিটামল প্রয়োজন পড়তেছে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে সংকট। কোম্পানিগুলো উৎপাদনের সাথে চাহিদা মেলাতে পারছে না। আবার কারো কারো দেখা যায় কাঁচামাল লকডাউনে আটকে আছে।

এদিকে ল্যাবএইড ফার্মাসিটিক্যাল এর বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়াজুল হাসান সুমন বলেন কোন কোম্পানিই এই ওষুধগুলো দিতে পারছে না।

এদিকে স্কয়ার কোম্পানি লিমিটেড এর বিক্রয় প্রতিনিধি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এখনকার এই সময়ে এভেলেবেল ওষুধ কোম্পানি থেকে পাচ্ছি না। আমি আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মার্কেটে এভেলেবেল হয়ে যাবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি মার্কেটে খোঁজখবর নিয়েছি কিছু কিছু কোম্পানি প্যারাসিটামল গ্রুপ সংকট আছে। এই উপজেলায় দিন দিন করোনার উপসর্গ রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, আশা করছি অচিরেই এর সমাধান হবে।

 

Print Friendly

Related Posts