কলেজ অধ্যক্ষকে ৬ টুকরা করলো সহকর্মীরা: প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব মুখপাত্র

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সাভারের আশুলিয়ায় নিখোঁজের ২৭ দিন পর সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার বেরন এলাকার সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মাটি খুড়ে নিহতের মরদেহের খণ্ডিত পাঁচটি টুকরা উদ্ধার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাশের খণ্ডিত টুকরা উদ্ধারের পর ওই কলেজটির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোতালেব, রবিউল এবং রবিউলের ভাগিনা বাদশা মিয়া। এদের মধ্যে বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা থেকে ও রবিউলকে আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। তিনি অনেক ভালো কোচিং করাতেন বলে রবিউলের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিলো। এরই জেরে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণিত হয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার লভ্যাংশ নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়।

গ্রেফতারকৃতরা গত ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার মোতালেব, রবিউল ও তার ভাগিনা বাদশা মিলে মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হত্যা এবং লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ জুলাই রাতে কোচিং শেষে মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে প্রতিষ্ঠানটির ১০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে যায় গ্রেফতারকৃতরা। সেখানে প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের মাথায় আঘাত করে বাদশ মিয়া। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মৃতদেহটি ছয় টুকরা করে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচটি টুকরো প্রতিষ্ঠানের সামনেই মাটি চাপা দিয়ে রাখে এবং তার খণ্ডিত মস্তকটি একটি পলিথিনে পেঁচিয়ে রাজধানীর আশকোনা নর্দ্দা এলাকার একটি ডোবায় ফেলে দেয়। মস্তকটি উদ্ধারে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।

কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মাটি খুড়ে নিহতের মরদেহের খণ্ডিত পাঁচটি টুকরা উদ্ধার করা হয়

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সিড়ির নিচে লুকিয়ে রাখা দা, শাবল, কোদাল, সিমেন্ট, বালু, তাদের পরিহিত গেঞ্জি এবং জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা ছিলো মৃতদেহটি পুতে রাখার পর জায়গাটি প্লাস্টার করে রাখবে এবং খণ্ডিত মৃতদেহের অংশ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিবে। এরই অংশ হিসেবে নিহতের মস্তকটি রাজধানীর আশকোনা এলাকায় নিয়ে ফেলা হয়। মৃতদেহটি উদ্ধারের সময় থানা পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, মিন্টু চন্দ্র বর্মন নিখোঁজের ঘটনায় নিহতের ছোটভাই গত ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটি জানালে র‌্যাবও ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে নিখোঁজের ২৭ দিন পর সোমবার মধ্যরাতে প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার রবিউলকে শনাক্ত করে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল র‌্যাবকে জানায়, গত ১৩ জুলাই রাতে রবিউল ও তার ভাগ্নে বাদশা মিলে কোচিং পরবর্তী সময়ে মিন্টুকে ১০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে বাদশা প্রথমে মিন্টু চন্দ্র বর্মনের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। পরে তাকে পৈচাশিকভাবে হত্যা করে ছয়টি টুকরা করে। পরে রবিউলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোতালেবকে রাজধানীর আশকোনা এলাকা থেকে এবং বাদশাকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত দুই বছর আগে ২০১৯ সালে মিন্টু চন্দ্র বর্মন অপর অংশীদার মোতালেব, শামসুজ্জামান ও রবিউল ইসলামকে নিয়ে আশুলিয়ায় জামগড়া বেরন এলাকার জাহিদুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে পার্শ্ববর্তী স্বপ্ন নিবাসে বাসা ভাড়া থেকে মিন্টু প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে থেকেই মিন্টু চন্দ্র বর্মন ওই এলাকার অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকুরী করতেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার মিন্টু চন্দ্র বর্মন লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউপির বাড়াইপাড়া গ্রামের শরত বর্মনের ছেলে।

Print Friendly

Related Posts