বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পাঁচ দিনের নাটকীয়তায় বার্সেলোনা থেকে এখন তিনি পিএসজির। জীবনের মোড় পাল্টে দেওয়া এই কটা দিনের গল্প শোনালেন ফুটবলের এই মহাতারকা।
গত বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বার্সেলোনা হঠাৎ জানায়, লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়মের বাধার কারণে তাদের পক্ষে মেসির সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব নয়। এরপর গত রোববার কাম্প নউয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ বছরের প্রিয় আশ্রয়কে বিদায় জানান মেসি। এর দুদিন পরই পিএসজির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেন রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে যে ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন, ক্রমেই যেখানে হয়ে উঠেছিলেন মধ্যমণি, প্রিয় সেই আঙিনা ছাড়তে বাধ্য হওয়াটা যেমন ঝড় তোলে ফুটবল বিশ্বে, তেমনি আবেগের ঢেউ তোলে তার হৃদয়েও। তাইতো কাম্প নউয়ে শেষ সংবাদ সম্মেলনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি মেসি।
তবে পেশাদার জগতে সামনে তাকাতেই হয়। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার জোরে শুরু করেছেন তিনি নতুন অধ্যায়।
বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার মুহূর্তটা কেমন ছিল? কীভাবে কাটিয়ে উঠলেন? আর পিএসজিতে যাওয়ার ভাবনা? বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঘটনাবহুল এই কয়েক দিনের কিছু কথা কিছু গল্প শোনালেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার।
“বৃহস্পতিবার রাতে বাবা বাসায় এলেন। পুরো সন্ধ্যা তিনি (হুয়ান) লাপোর্তার সঙ্গে ছিলেন। বাবা ফিরেই আমাকে ব্যাপারটি জানান। শুনে সত্যিই ভেঙে পড়েছিলাম।”
“এরপর নিজেকে আমার প্রস্তুত করে নিতে হয়েছে আন্তোনেল্লাকে (মেসির স্ত্রী) বলার জন্য। আমরা কান্না করেছিলাম এবং সন্তানদেরও বিষয়টা জানাতে হতো। খুব খারাপ লাগছিল। তবে সন্তানদের বলার আগে আমরা দুজন পরস্পরের মন ভালো করার চেষ্টা করেছি। ওদেরকে বলার উপযুক্ত একটা উপায় খুঁজছিলাম, কারণ গত ডিসেম্বরেই ওদের বলেছিলাম যে আমরা বার্সেলোনাতেই থাকছি।”
মেসির তিন ছেলের মধ্যে বড় থিয়াগো, বয়স আট বছর। অন্তত তার কাছে এই সিদ্ধান্ত একটা ধাক্কা হয়ে আসবে, ভেবেছিলেন মেসি।
“আমরা জানতাম, এটা তাদের জন্য কতটা কঠিন হবে। বিশেষ করে থিয়াগোর জন্য। তবে কখনও কখনও হয়তো কিছু বিষয় আমরা অনেক বেশি ভাবি, কিন্তু শিশুরা দ্রুতই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তারা এমনভাবে সবকিছু মেনে নিতে পারে, আমরা যা কল্পনাও করতে পারি না।”
“থিয়াগো হয়তো তার ভাবনা চেপে রেখেছে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সে সবকিছু বেশ উপভোগ করছে। কিন্তু আমি তাকে বুঝি, সে আমার মতোই। সে মনে মনে কষ্ট পেলেও দেখাচ্ছে না। তবে এটা তেমন গুরুতর কিছু নয়। সে মানিয়ে নেবে এবং এটা তার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা হবে।”
বার্সেলোনা ছেড়ে আসতে হওয়ায় মনে খারাপ লাগা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে বিশ্বাস মেসির।
“আমরা পাঁচজনই খুব খুশি থাকব এবং এই ক্লাবে আমরা সময়টা উপভোগ করব।”
বার্সেলোনার ‘চুক্তি হচ্ছে না’ ঘোষণার পর থেকেই মেসিকে দলে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল অনেক ক্লাব, কাম্প নউয়ে শেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই তা জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে থেকে পিএসজি কেন, সেটিও খোলাসা করেছেন কাতালান ক্লাবটিতে রেকর্ড ৩৫টি শিরোপা জয়ী।
কারণ আছে বেশকিছু। তবে বিবিসির সাক্ষাৎকারে তিনি আলাদা করে বললেন পুরনো বন্ধু ও জাতীয় দলের সতীর্থদের কথা।
“আসলে আমার বাবা যখন লিওনার্দোর (পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন, নেইমার ততক্ষণে জানত, কারণ সবকিছু নিয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছিলাম।”
“(আনহেল) দি মারিয়া ও (লেয়ান্দ্রে) পারেদেসকেও বলেছিলাম যে প্যারিসে আসার সম্ভাবনা আছে। দলটিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছি। যখন যা হচ্ছিল, সবকিছুই আমরা একে অপরকে বলছিলাম, সত্যিই আমি আসছি কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্যই।”
সবকিছু সঠিকভাবেই এগিয়েছে এবং এখন মেসি পিএসজির খেলোয়াড়। নতুন চ্যালেঞ্জে নতুন জার্সি গায়ে মাঠে নামতে তর সইছে না তার। কিন্তু সেজন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে তাকে, সেটা ভালো করেই জানেন ও বোঝেন অনেকের মতে ইতিহাসের সেরা এই ফুটবলার। কারণ গত ১০ জুলাই দেশের হয়ে হয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের পর থেকে ফুটবল থেকে দূরে আছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
আগামী সোমবার লিগ ওয়ানে নিজেদের পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে স্ত্রাসবুরের মুখোমুখি হবে পিএসজি। দলের বেঞ্চে হয়তো দেখা যাবে মেসিকে।