বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনি এবং ফ্যাশন মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় তারা একই প্রিজনভ্যানে করে আদালত থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছান।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সিনিয়র সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল জলিল জানান, পরীমনি ও মৌকে কারাগারের রজনীগন্ধা ভবনে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
মহামারীকালের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাদের সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এর মধ্যে তাদের করোনার লক্ষণ দেখা না দিলে পরে তাদের সাধারণ বন্দিদের ভবনে পাঠানো হবে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নারী বন্দিদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা এখনও না থাকায় পরীমনি ও মৌকে এ কারাগারে পাঠানোর কথা জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
মাদক মামলায় দুই দফা রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পরীমনির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল শুক্রবার দুপুরে এ আদেশ দেন।
পরীমণির পাশাপাশি তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু, পরীমনির একটি সিনেমার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীর ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিচারক।
তবে পর্নগ্রাফি আইনের অন্য একটি মামলায় রাজ ও সবুজের চার দিনের রিমান্ড আদেশ থাকায় তাদের সিআইডি হেফাজতে পাঠানো হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু জানিয়েছেন।
মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ- কমিশনার মো. জাফর হোসেন জানান, মাদক আইনের দুই মামলায় চার আসামিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে রিমান্ড শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ।
নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না করে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে পরীমনির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না থাকায় এজলাসে হাজির না করে পরীমনিকে রাখা হয় হাজতখানায়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয় বেলা আড়াইটার পর।
মজিবুর রহমান, নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীসহ কয়েকজন আইনজীবী এদিন পরীমনির পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় দুই দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন পরীমনি। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই করা হচ্ছে।
মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে রাখা হোক।
অন্যদিকে পরীমনির জামিনের পক্ষে তার আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, আসামির সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষা এবং শিল্পী হিসেবে তাকে মানসিক উৎপীড়ন থেকে রক্ষার মানবিক তাগিদেই জামিনে মুক্ত করা আবশ্যক।
পরীমনির মুক্তির দাবিতে সমাজের মুক্ত চিন্তার প্রগতিশীলরা সোচ্চার হচ্ছে। বিজ্ঞ আদালত নিশ্চয় পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, প্রতিদিন এসব সংবাদ ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্টজনেরা তার মুক্তি দাবি করছেন।
সে যদি এই মামলায় অপরাধী হয়, তাহলে তাকে মামলার বিচারের মধ্যে দিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে। কিন্তু আপাতত যে কোনো শর্তে তার জামিন চাই বিজ্ঞ আদালত।
পরীমনির বাসা থেকে মদ উদ্ধারের সাক্ষী পাওয়া একটি ‘অনিশ্চিত বিষয়’ হবে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট রেখে জামিন দেওয়া হোক। কারণ আইও বলেছেন, আসামি পালিয়ে যেতে পারে। পাসপোর্ট জমা রাখলে তো বিদেশে যেতে পারব না। বিশ্বময় অতিমারী সমস্যা চলছে, এরমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার ওই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
পরীমনির বাসায় র্যাবের অভিযান ‘আইনসিদ্ধ হয়নি’ দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, তারা আসামিকে গ্রেপ্তার করে উত্তরায় তাদের অফিসে নিয়ে গেছেন। তাকে থানায় হস্তান্তর না করে নিজেদের কাছে কয়েক ঘণ্টা রাখার পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, আসামির বাসা থেকে প্রচুর দেশি-বিদেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে, তার কাছে এলএসডি পাওয়া গেছে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসায় পৌঁছানোর আধা ঘণ্টা পর দরজা খুলেছেন। সেই সময়ের মধ্যে তিনি মদগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছেন।
তিনি নায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের অনেক শিল্পপতি, কোটিপতি ও সম্ভ্রান্ত ঘরের লোকদের ও তরুণ সমাজকে ডিজে পার্টির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করছি।