বাসাইলে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই নদীর পানি কমে টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নিন্মাঞ্চল হওয়ায় বাসাইল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এদিকে,পানি কমতে থাকায় এ উপজেলায় নদী ভাঙ্গন আবারো তীব্র আকার ধারন করেছে। বন্যা কবলিত এলাকার গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষগুলো গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।

পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে বীজতলা, রোপা আমন ধান ও সবজি খেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট। ভেঙ্গে গেছে রাস্তা-ঘাট। বানভাসিদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পারাপারের জন্য নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলাই একমাত্র ভরসা। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বেশ কিছু এলাকায়।

উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে বেশি দুর্ভোগের শিকার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান, কোদালিয়াপাড়া, যৌতুকি,জিকাতলী পাড়া, মটেশ্বর, তারাবাড়ি, সৈদামপুর পুর্বপৌলী, সিঙ্গারডাক, কালাচান পাড়াসহ ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম। হাবলা ইউনিয়নের টেংগুরিয়াপাড়া, ছয়শত, জীবনেশ্বর, থুপিয়া, গুল্লা, বয়রা। ফুলকী ইউনিয়নের ফুলকী দক্ষিণপাড়া, বালিয়া, খাটরা, নিড়াইল, করোটিয়াপাড়া, ময়থা। কাশিল ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, বাঘিল, স্থলবল্লা। কাউলজানী ইউনিয়নের বাদিয়াজান, সুন্না, বার্থা, গিলাবাড়ি, ডুমনীবাড়ি, কাঙ্গগাগলীছেও, এবং বাসাইল সদর ইউনিয়নের মিরিকপুর, রাশড়া, ইশ্বরগঞ্জ, হান্দুলী। এসব এলাকার মানুষের নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোন উপায় নেই।

বন্যা দুর্গত এলাকার কমলা রানী বলেন, গরু-বাছুর, হাস-মুরগী নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে আছি। সবচেয়ে বেশি চিন্তা শিশু বাচ্চাদের নিয়ে। সব সময়ই আতংকে দিন কাটছে।

অসহায় ভূক্তভোগীরা জানান, করোনার ধকল না কাটতেই বন্যার জলে বন্ধি আমরা। কামাই-রোজি একবারে বন্ধ। অনেকেরই ঘরে চুলা জ্বলছে না। করোনার লকডাউন, আবার বন্যার পানি । জীবন আর চলে না।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন অর রশিদ জানান আমার ইউনিয়নে প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। পাকা কাঁচা রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে। কালর্ভাট ভেঙ্গে গেছে। রাস্তা ভেঙ্গে অনেকে জায়গায় বড়বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। নৌকা ছাড়া চলাই যায় না।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ হতে আমরা বন্যা দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রান পৌছে দিচ্ছি। ৩৩৩ নম্বরে কল দিলেও আমাদের পক্ষ হতে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়।
ত্রাণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ভৌগলিক ভাবে বাসাইল একটি নীচু এলাকা। তাই প্রতি বছরই বন্যার সাথে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়। এবারও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গ্রামীণ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পানিবন্ধি সহায়তার জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। এলাকায় আরও পর্যাপ্ত ত্রাণসহযোগিতার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

Print Friendly

Related Posts