আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস পুকুরে পড়ে ১ যাত্রী নিহত ও অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত ছায়েদ আলী (৬০) নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার কোচপুর গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-ভূঞাঁপুর মহাসড়কের উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের যদুরপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘনাটি ঘটে।
নওগাঁ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের বরেন্দ্র এক্সপ্রেস বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৬০২৩) প্রায় ৪০ জন যাত্রী নিয়ে নওগাঁর সাপাহার থেকে ঢাকা যাচ্ছিলো। বাস যাত্রী আমিনুল ইসলাম জানান, বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়ে যানজট থাকায় মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ভূঞাঁপুর হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলো। সঠিকভাবে বাসটি চালাতে চালককে বার বার সতর্ক করা হয়েছিলো, বার বার সতর্ক করার পরও দুর্ঘটনাটি ঘটলো। পরে বাসটি সড়কের বাঁক ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর চালক, সুপারভাইজার ও সহকারি পালিয়ে গেছে।
নিহত ছায়েদ আলীর সেজো ছেলে মাহামুদুল (২৬) বলেন, সাভারের ছায়াবিথী এলাকায় থেকে আমরা দিনমজুরের কাজ করি। বাড়িতে কাজ কম থাকায় পরিবার ভালো ভাবে চালাতে বাবাও কাজে আসতে চান। তাঁকে নিয়ে চাচাতো ভাই আমিনুলসহ তিনজন ঢাকা যাওয়ার জন্য সোমবার রাত ৮টায় দিঘীরহাট বাজার থেকে এই বাসে রওনা হই। ছোট ভাই হারুন অর রশিদ ডিগ্রীতে লেখা পড়া করে। বাবা-মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও ছোট ভাই হারুনকে নিয়ে আমার সংসার। দিনমজুরের কাজ করে বড় দুভাই মাহাবুর ও মাসুদ নিজেদের সংসার চালিয়ে যতটুকু পারে সহযোগীতা করেন। ছোট ভাই হারুনের লেখাপড়া নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো, এখন চিন্তায় পড়ে গেলাম, কষ্ট করে হলেও লেখাপড়া চালাতে হবে।
নিহতের মেঝো ছেলে মাসুদ মঙ্গলবার দুপুরে জানান, তাঁরা লাশ বুঝে পেয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছেন। কষ্ট হলেও মায়ের দেখাশোনা ও হারুনের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।
স্থানীয় আরিফ, আমজাদ সহ ৪/৫ বলেন, ভোর ৫টার সময় শব্দ পেয়ে এসে দেখি বাসটি পুকুরে পড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলে তারাও দ্রুত চলে আসে। এ মোড়টি খুবই বিপদজনক, মাঝে মাঝেই এখানে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এখানে মোড়ের দুই প্রান্তে গতিরোধক দিলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমে যাবে।
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে টাঙ্গাইল, ভূঞাঁপুর ও এলেঙ্গা তিনটি ইউনিটের ৫টি গাড়ি ডুবুরি দলসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘন্টার উদ্ধার অভিযানে একজনের মরদেহ ও ৩২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়, বাকী আহতরা ঘটনাস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। কেউ নিখোঁজ আছে বলে জানা যায়নি।
কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লার আজিজুর রহমান জানান, নিহতের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়েছে।