চির বিদায় নিলেন দেশের ক্রিকেট গুরু জালাল আহমেদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠের ওপর জালাল আহমেদ চৌধুরীর নিথর দেহ। জানাজার জন্য সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আর অমনি এক পশলা বৃষ্টি পড়তে পড়তেও থেমে গেল। জানাজা শেষে ক্রিকেট কোচ ওসমান খান মাইক্রোফোন হাতে কথা বলতে গিয়ে কাঁদছিলেন। কান্নাকন্ঠ জড়িয়ে যাওয়ায় সব কথা বুঝা না গেলেও একটা কথা পরিস্কার শুনলেন সবাই-আমি একা হয়ে গেলাম।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু কথা বলতে এসে কাঁদছিলেন। হাসানুজ্জামান বাবলু এসেছিলেন, আশিকুর রহমান মিকু বলে গেলেন অপুরণীয় ক্ষতির কথা।
সাবেক ক্রিকেটার, জাতীয় ক্রিকেট কোচ, সংগঠক, সাংবাদিক, ক্রিকেট লিখিয়ে জালাল আহমেদ চৌধুরী (৭৪) রাজধানীর একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেও যান। গত বুধবার আবার অসুস্থ হলে পুনরায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে বাদ আছর আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। বিসিবির পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি জানিয়েছেন, জালাল ভাইয়ের এলাকায় একটি জানাজা হয়েছে।’ ক্রিকেটে জালাল আহমেদের অবদানের কথা চির স্মরণীয়। ছেলে মেয়েরা বিদেশে থাকেন। কিন্তু নিজে যেতেন না ক্রিকেটের কাছে থাকবেন বলে।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাফুফে, বিএসপিএ, বিএসজেএ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিওএ প্রমুখ সংগঠন। মঙ্গলবার বিসিবির সভায় এক মিনিট নিরবতা পালণ করা হয়। বিএসজেএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জালাল আহমেদ। তিনি ছিলেন ক্রিকেটার। পরে যুক্ত হন ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতায়।
১৯৭৯ সালে দেশের প্রথম আইসিসি ট্রফিতে তিনি ও ওসমান খান ছিলেন দলের কোচ। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতে তিনি ছিলেন প্রধান কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সহকারী। দেশের দু:সময়ের ক্রিকেটে বিনা পারিশ্রমিকে দলের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি।
ষাটের দশকে ক্রিকেটার হিসেবে জালাল আহমেদ চৌধুরীর ক্যারিয়ারের শুরু উদিতি ক্লাবের হয়ে। তিনি ছিলেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান, অফ-স্পিন বোলিংও করতেন। তিনি ইয়াং পেগাসাস, ধানমন্ডি ক্লাব, টাউন ক্লাবে খেলেছেন, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন রেলওয়ের হয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করার পরও ক্রিকেট ছাড়েননি। ১৯৭৯ সালে ভারতের পাতিয়ালা থেকে ক্রিকেট কোচিংয়ের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) কিছুদিন চাকরী করে পরে ছেড়ে দেন। কোচিং ক্যারিয়ারে তিনি আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী, মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, ধানমন্ডি, ইয়াং পেগাসাস, সাধারণ বীমা, কলাবাগানসহ বিভিন্ন ক্লাবে কাজ করেছেন।
এছাড়াও বিসিবির হোম ডেভেলপমেন্ট, ক্রিকেট অপারেশন্স, আম্পায়ার্স কমিটিসহ নানা ভূমিকায় কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নিউ নেশন পত্রিকা দিয়ে শুরু, এরপর বাংলাদেশ টাইমস-এ। দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছেন।