মো. রাসেল হোসেন, ধামরাই: ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে দেশের পশ্চিমা অঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার লোক চলাচল করেন। প্রতিদিন গড় হিসেবে প্রায় পশ্চিমা অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার লোক আসা যাওয়া করেন। এই ৫০ হাজার মানুষ আনা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন কয়েক হাজার বাস ট্রাক চলাচল করে। ঈদে এই হিসাব গিয়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ।
এই সব গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নেই ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত ধামরাই অংশে কোন ট্রাফিক পুলিশ। তবে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করেন। সেটি দরকারের তুলনায় অনেক কম। ঢাকা আরিচা মহাসড়কে ধামরাই অংশে ইসলামপুর,ঢুলিভিটা যানজট নিত্য দিনের। বর্তমানে ধামরাই শিল্প নগরীতে পরিনতন হচ্ছে। আর এই সব শিল্প নগরী বেশিরভাগই মহাসড়ক কেন্দ্রিক গড়ে ওঠেছে। তাই এই শিল্প অঞ্চলের সামনে প্রতিদিন সকাল বিকেল যানজট লেগেই থাকে। বর্তমানে ধামরাই অংশে ট্রাফিক পুলিশ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগে ৩০-৫০ মিনিট সময় লাগার কথা ছিল যেখানে ১৫ মিনিট। বলছিলাম ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কথা।
তবে বেশ কয়েক দিন ধরে ধামরাই ঢুলিভিটা ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সাভার নামা বাজার ও টাঙ্গাইল যাওয়ার চার রাস্তার মধ্যে সেচ্ছাশ্রমে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধকে যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা গেছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধামরাই পৌর শহরের বরাদ নগর মহল্লার বাসিন্দা আমজাদ খান। প্রতিদিনই একটা লাঠি হাতে মাথায় ক্যাপ পরে গলায় বাঁশি ঝুলিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কথা হয় আমজাদ খানের সাথে।
তিনি বলেন, আমি ডি লিংক গাড়ি চালাতাম শুরু থেকে। এখন বয়স হয়ে গেছে তাই গাড়ি চালাতে পারি না। এখানে গাড়ি শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করি আমার দায়িত্ব বোধ থেকে। এখানে প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। আমি যেহেতু গাড়ি চালাতাম আমি বুঝি যানজটের কি কষ্ট। তাই আমি এখানে যানজট এড়াতে কাজ করি। আমি এখানে কাজ করি কোন টাকার বিনিময়ে নয়। খুশি হয়ে যদি কেউ আমাকে কিছু দেয় সেটা দিয়ে আমার সংসার চলে।
গত কয়েক বছর ধরে যানজট নিরসনে সকাল বিকেলে সেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ধামরাই ঢুলিভিটা ও ইসলামপুর অংশে।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই শাখার সভাপতি মো. নাহিদ মিয়া বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ও যানজট নিরসনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমরা। সড়কে যে পরিমান বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দুরীকরণে ট্রাফিক পুলিশের ভুমিকা অপরিহার্য। বিভিন্ন সময়ে মহাসড়কে আমরা সেচ্ছায় ট্রাফিক কার্যক্রম করে থাকলেও যতক্ষন কাজ করি ততক্ষন শৃঙ্খলা বজায় থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে আগের রূপে চলে যায় সড়ক। আমি মনে করি, বর্তমানে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অত্যন্ত ব্যস্ততম মহাসড়ক। এ সড়কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ড ও কালামপুর বাসস্ট্যান্ড। এ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন সময়ে সড়কে বিশৃঙ্খলার ফলে অনেকে দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। তাই নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই শাখার পক্ষ থেকে আমাদের দাবি অতি সত্বর ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেয়া হউক অথবা পরিবহণ মালিকদের পক্ষ থেকে কমিউনিটি পুলিশ নিয়ে দেওয়া হলে কিছুটা হলেও সড়কে দুর্ভোগ কমবে।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে গাজিপুর রিজিয়ন পুলিশ সুপার আহমদ আলী খান জানান, ট্রাফিক ডিউটি করার মত আমাদের জনবল নেই।স্থানীয়ভাবে ট্রাফিক পুলিশিং কার্যক্রম করার দায়িত্ব ঢাকা জেলা পুলিশ। আমাদের হাইওয়ে পুলিশ পেট্রোল ডিউটি করে। আমাদের সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ যানজট নিরসনে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এরিয়া অনুসারে জনবল কম তারপরও আমরা যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, প্রয়োজন বিবেচনায় ধামরাই ঢুলিভিটা ও কালামপুরে যেখানে ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন হয় সেখানে আমরা ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করব।
ছবি : ধামরাই, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক থেকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে গাড়ি বের করে দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আমজাদ খান।