বাসাইল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৩১ শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগ

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কলেজের টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এঘটনায় গত রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কলেজের ৩১ শিক্ষক-কর্মচারী টাকা আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মসহ সাতটি বিষয় উল্লেখ করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গভর্নিং বডির সভাপতি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেন এ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ড. হাবিবুর রহমান ২০০৮ সালে বাসাইল ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের বেশ কিছুদিন পর থেকেই তিনি বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ন ও দুর্নীতি করে আসছেন। অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান কলেজে নির্ধারিত রেজিষ্টারে যথাসময়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করেন না। প্রতিদিনের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিদিনেই দৈনন্দিন ক্যাশবহি ও কলামনার ক্যাশবহিসহ হিসাবে অন্যান্য রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করার বিধি-বিধান থাকা সত্বেও তিনি কোন তোয়াক্কা করেন না। তিনি ২০০৮ সালে কলেজে অধ্যক্ষ সিহেবে যোগদান করার পর ২০১৫ সালে প্রায় ৮ বছরের হিসাব দৈনন্দিন ক্যাশবহি ও কলামনার ক্যাশবহিতে লিপিবদ্ধ করেন। ২০২১ তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এযাবৎ দৈনন্দিন ক্যাশবহি ও কলামনার ক্যাশবহিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করেন। এখনও পর্যন্ত দুইবছরের অধিক সময়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব দৈনন্দিন ক্যাশবহি ও কলামনার ক্যাশবহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাবের গরমিল থাকায় তিনি ব্যাকডেটে ভাউচার প্রস্তুত করে তা সমন্বয় করে যাচ্ছেন। বিগত ১০ বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি কোচিং ফি বাবদ প্রতি বছর ৬ লাখ করে মোট ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ওই টাকার ১০ শতাংশ প্রায় ৬ লাখ টাকা কলেজের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা। কিন্তু তিনি এই ৬ লাখ টাকা কলেজের আয়-ব্যয় রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করেননি। কলেজের অনুকূলে ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে জমাও করেননি। এই টাকা তিনি সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৯ সালের এপ্রিল-এ এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ফি এইচএম ইনস্টিটিউশনের কাছ থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা, সরকারি জোবেদা-রোবেয়া মহিলা কলেজ থেকে ৫৭ হাজার টাকা তিনশত টাকা ও করটিয়া লাইট হাউজ থেকে ৫২ হাজার টাকাসহ মোট তিন লাখ ৯২ হাজার তিনশত টাকা গ্রহণ করেন। এই টাকা তিনি কলেজের আয়-ব্যয়ের রেজিস্ট্রারে যথাসময়ে লিপিবদ্ধ করেননি। কলেজের অনুকূলে ব্যাংকের সাধারণ হিসাবেও জমা করেননি। উক্ত টাকা তিনি আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে তার কাছে রাখেন। পরবর্তীকালে তিনি তার মনগড়া ভাউচার প্রস্তুত করে আয়-ব্যয়ের হিসাব সমন্বয় করার চেষ্টা করেছেন। তারপরও হিসাব সমন্বয় না হওয়ায় তিনি সাদা কাগজে জাল ভাউচার প্রস্তুত করে হিসাব সমন্বয় করেন। প্রতি তিন মাস অন্তর অভ্যন্তরীণ অডিট করানোর বিধান থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রায় ১৩ বছরে কোনরূপ অভ্যন্তরীণ অডিট করাননি। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরর কোন অডিটও করাননি এই অধ্যক্ষ।

এদিকে ২০১৫ সালে অধ্যক্ষের দুর্বিনীত আচরণ, চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে তৎকালিক কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়াও কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক অভিভাবক সদস্য আলমগীর হোসেন ২০২০ সালে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহাররের বিষয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগ দেন। এমন কার্যকলাপে অধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষক ও কর্মচারিদের প্রকাশ্য বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের পর কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ইউএনও মনজুর হোসেন কলেজে গিয়ে আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র তার নিজের আয়ত্ত্বে নেন।

অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রভাষক মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতির শেষ নেই। তিনি বিভিন্নভাবে কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। তার আচরণও খুব খারাপ। তিনি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। তার আর্থিক দুর্নীতির কারণে আমরা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

প্রভাষক শফিউল আজম খান বলেন, ‘অধ্যক্ষ একজন দুর্নীতি বাজ ব্যক্তি। কলেজের টাকা বিভিন্নভাবে আত্মসাত করেছেন। তার আচরণও ভালো না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। আমরা বিষয়টি তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বাসাইল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কোনও টাকা আত্মসাৎ করিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অভিযোগকারীদের মধ্যে একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের ভুল বুঝিয়ে তারা স্বাক্ষর নিয়েছেন। অনেকের আবার সাদা কাগজেও স্বাক্ষর নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এপর্যন্ত তারা বেনামে আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিসে দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ইউএনও কলেজে এসে আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে গেছেন বলেও তিনি জানান।

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।থ

Print Friendly

Related Posts