বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বর্তমানে ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ৮-১০টি ক্লিনিকে বর্ষার শুরুতেই পানি প্ররেশ করে। আর এসব ক্লিনিক বছরের প্রায় ৩-৫ মাস জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।সরকারের উদ্দেশ্য শতভাগ সফল্যের জন্য ক্লিনিক ভবনগুলো উচু ও সেবা গ্রহিতাদের গমনোপযোগী রাস্তা করে পুননির্মানের দাবি ভুক্তভোগি ও সচেতন মহলের।
ক্লিনিকগুলো নির্মানের সময় মাটি ভরাট না করেই অপরিকল্পিত ভাবে নীচু জমিতে নির্মান করায় অধিকাংশ ক্লিনিক বছরের প্রায় ৪-৫ মাস জলাবদ্ধ থাকে। আবার ভবনগুলো মূল রাস্তা থেকে দুরে নির্মিত হওয়ায় ও সেখানে সংযোগ রাস্তা না থাকায় রোগী ও সেবা গ্রহিতাদের পড়তে হয় যাতায়াতের বিড়ম্বনায়।
এদিকে প্রতি বছর দীর্ঘ সময় পানি থাকায় ও সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ ক্লিনিকের জড়াঝীর্ণ অবস্থা। কোনটার ছাদের পলেস্তর খসে পড়ে রড বের হয়ে গেছে। কোনটির মেঝে দেবে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেয়াল, দরজা, জানালা। কোন কোন ক্লিনিকে সেবার দায়িত্ব প্রাপ্তদের উদাসিনতা। জনসংখ্যা ও চাহিদার তুলনায় ঔষধ সরবরাহ কম থাকাসহ নানাবিধ কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। ফলে প্রত্যন্তাঞ্চলে ক্লিনিক নির্মানের সরকারের যে মূল উদ্দেশ্য, তা ব্যাহত হচ্ছে।
এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বাঘিল ফুলবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় এখনো ক্লিনিকটি পানিতে ভাসছে।অপরদিকে ক্লিনিকের সিএইচসিপি ইমু আক্তার ৬ মাসের মাতৃত্বকালিন ছুটিতে। তার অবর্তমানে দায়িত্ব পালনের জন্যও দায়িত্বশীল কেউ নেই।
কথা হয় ইমু আক্তারের সাথে তিনি বলেন,আমার ক্লিনিকে বর্তমানে ২-৩ ফুট পানি রয়েছে। বছরের প্রায় ৪-৫ মাসই পানি থাকে চারপাশে।শুকনা মৌসুমেও ফ্লোর ও দেয়াল স্যাঁৎস্যাঁতে থাকায় দুই একদিনেই ঔষধের গায়ে ফাঙ্গাস পড়ে নস্ট হয়ে যায় । তিনি বলেন আমি মাতৃত্বকালিন ছুটিতে আছি। তার পরেও উপরের অনুমতি নিয়ে আমার বাড়িতে ওষধপত্র রেখে, বাড়ি থেকেই এলাকার মানুষকে সাধ্যমতো স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তার এখানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। । তিনি জানান ওষুধ দেওয়া হয় ৩০ প্রকারের। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রাপ্ত সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের এ সেবায় আমরা গ্রামের মানুষ খুশি। কিন্তু ক্লিনিকটি নির্মানের সময় অপরিকল্পিত ভাবে মাটি না ফেলে নিচু জমিতে নির্মান করায় বছরের প্রায় ৪ মাস ক্লিনিকে পানি থাকে। এজন্য স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকা বাসী।
এদিকে অন্যান্য ক্লিনিক পরিদর্শনকালে ক্লিনিকে সিএইচসিপি থাকলেও তারা ঠিক সময়ে আসেন না, এলেও ১২টার দিকে চলে যান। ফলে এলাকার বাসিন্দারা ঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলেও বেশ কিছু ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।
ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্য বাঘিলের আবুল হাসেম মিয়া বলেন, ক্লিনিকগুলোর জন্য স্থানীয় ব্যাক্তিরা জমি দান করেছেন। অথচ নির্মানের সময় কোন মাটি না ফেলে নিচু জমিতে ভবনগুলো নির্মান করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ ক্লিনিক বছরের প্রায় ৪-৫ মাসই পানি থাকে ক্লিনিকটি উচু করে পুনরায় ভবন নির্মান করা উচিৎ।
এদিকে ফুলকি ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে বুধবার সরেজমিন গিয়ে একই অবস্থা দেখা যায়। এটির চারপাশে এখনো প্রায় ৩-৫ ফুট পানি রয়েছে। এ ক্লিনিকের আওতায় থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বঞ্চিত স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা থেকে।
ঝনঝনিয়ার সাবেক ফুটবলার ও সাবেক ইউপি মেম্বার আইয়ুব খান বলেন, সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদোগে সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
তবে তিনিসহ বিভিন্ন ক্লিনিক এরিয়ার ভুক্তভোগী অনেকেই বাঘিল, ঝনঝনিয়া, হাবলা, কাঞ্চনপুরসহ উপজেলার যে সব ক্লিনিক নিচু জমিতে করা হয়েছে সেগুলো উচু করে পুনরায় নির্মানের জোর দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আইসড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি আলী ইমরান আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে বেগবান ও সফল করতে ক্লিনিক গুলো ফ্লাড-লেভেল মাটি ফেলে পুননির্মান করা জরুরী।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, ক্লিনিক গুলোতে পানি থাকায় চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ব্যাহত। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। উপজেলার ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ঝনঝনিয়া, বাঘিল, ব্রাহ্মণপাড়িল, রাশড়া, পুর্বপৌলী ও নাইকানীবাড়িসহ ৮-১০ টি ক্লিনিকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানি থাকে। বাসাইল নীচু এলাকা হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ক্লিনিক ভবন গুলো উচু করে পুননির্মানেরর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।
এআই/টাঙ্গাইল