গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল হাকিম মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও আওয়ামী আদর্শ বিরোধী আখ্যায়িত করে তার মনোয়নপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রায়েদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হাই এর কন্যা, যুব মহিলা লীগ গাজীপুর জেলা শাখার যুগ্ম—আহবায়ক এবং কাপাসিয়া থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিনা খাতুন (মুনমুন)।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আমিনা খাতুন (মুনমুন) বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় দেশব্যাপী ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন চলছে। আগামী ১১ নভেম্বর তারিখে গাজীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই এরজন্য মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। দলীয় ব্যানার এবং প্রতীকে ইউপি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এই নির্বাচন অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছেন, দলের জন্য, দেশের জন্য নিবেদিত আত্মত্যাগী যারা তারা কপর্দকহীন হলেও সকল ক্ষেত্রেই তাদের প্রাধান্য দিতে হবে। দেশে নারীর ক্ষমতায়নেও তাঁর ভূমিকা অত্যুজ্জল। কিন্তু আমার এলাকা গাজীপুর কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নে সম্পূর্ণ এর ব্যতিক্রম ঘটছে।
তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, রায়েদ ইউনিয়নে এবারে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মো. শফিকুল হাকিম মোল্লা নামে একজন দুশ্চরিত্র, সাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, বিতর্কিত ও স্বার্থপর ব্যক্তিকে আমাদের প্রাণের প্রতীক নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসেবে নিজেকে জাহির করলেও ধুরন্ধর প্রকৃতির শফিকুল হাকিম মোল্লা বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমানের মতো দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী। ক্ষমতার জন্য এক সময় বিএনপিতে যোগদানকারী এই শফিক মোল্লা তার ভাই স্থানীয় সাংসদের পিএস কাজল মোল্লার সহযোগিতায় প্রভাব—প্রতিপত্তি বিস্তার করে আমার পিতা রায়েদ ইউনিয়নের জনগণের ভোটে পাঁচবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হাই—এর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের পদটি বাগিয়ে নেন। এই চেয়ারম্যান পদ দখল করার পর নানা ধরনের অপকীর্তির মাধ্যমে এলাকায় একজন ধিকৃত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হলেও আর্থিক প্রভাব—প্রতিপত্তিতে আমাদের প্রাণের দল আওয়ামী লীগের মহল বিশেষের নজর কেড়েছেন—, মনোনয়ন পাচ্ছেন। তার প্রভাব—প্রতিপত্তির কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমি একজন নারী কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী পরিবারের সন্তান হিসাবে আমার আবেদন গ্রহণ করার জন্য আওয়ামী লীগের নীতীনির্ধারকদের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু একটি বিশেষ মহলের অপতৎপরতার কারণে আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি থেকে আগত একজন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পরিবারসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর কাছে জমি দখল, অবিচার, অন্যায়সহ নানা রকম অনৈতিক অভিযোগ রয়েছে। একজন মামলাবাজ চেয়ারম্যান হিসাবে তার কু—খ্যাতি রয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন সময় মামলা মোকদ্দমা দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায় করে থাকেন। তিনি তার বাগিয়ে নেয়া দলীয় পদ—পদবীর প্রভাব ব্যবহার করে দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকেন। কাজেই গণধিকৃত শফিকুল হাকিম মোল্লার মনোনয়ন বাতিল না করলে রায়েদ ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। সে কারণেই আমি আসন্ন রায়েদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।
আমিনা খাতুন (মুনমুন) অবিলম্বে শফিকুল হাকিম মোল্লার মনোনয়ন বাতিল করে তাকে অথবা আওয়ামী লীগের অন্যকোন ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিয়ে কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নবাসীর চাওয়া—পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন উম্মে কুলসুম (ইভা), আকরাম হোসেন, রোকেয়া, আইন উদ্দিন, আতিকুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।