টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে ট্রেন দুর্ঘটনায় মা, বাবা ও ছোট ভাই হারানো আবদুল্লাহ ইয়ান (৫) এখন মোটরসাইকেলের শব্দ শুনলেও ভয় পায়। সব সময়ই সে মাকে খুঁজছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পাশাপাশি খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ইয়ান।
বর্তমানে আব্দুল্লাহ ইয়ান টাঙ্গাইল শহরের কোদালিয়া নানা বাড়িতে বসবাস করছে। তার নানী ও মামী তাকে দেখা শোনা করছে। বড় হয়ে ইয়ান পুলিশ অফিসার হতে চায়।
ইয়ানের মামাতো বোন ফাওজিয়া ইসলাম জানান, শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইয়ান বায়না করেছিলো সে মোটরসাইকেলের সামনে বসে ট্রেন দেখবে। তার বাবা আজগর বায়না পূরণ করতে তাকে মোটরসাইকেলের সামনে বসিয়েছিলো। পিছন থেকে তার মা সানসিয়া সুলতানা সারা ইয়ানের বাবাকে বলেছিলো ট্রেন আসার আগে লাইন পার হওয়া সম্ভব হবে কি। সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হাতিলা রেল লাইন পার হচ্ছিলেন। চার পাশে জঙ্গলের কারণে তারা দেখতে পায়নি। ট্রেন কাছে চলে আসতেই মোটরসাইকেলের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আজগর সামনে থেকে ইয়ানকে শার্টে ধরে ছুড়ে মারে। ইয়ান পুকুরের পাড়ে পরে। ইয়ান সুস্থ থাকে। ইয়ানের পর তার ছোট ছেলে রাইয়ানকে উচু করে ছুড়ে দেওয়ার জন্য। ততক্ষণে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লেগে ৩ জন ৩ জায়গায় ছিটকে যায়। ঘটনাস্থলেই আজগরের স্ত্রী ও তার ছোট ছেলে রাইয়ানের মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় আজগর ও ইয়ানকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইয়ানকে ছেড়ে দেয়। আজগরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় রেফার্ড করায়। ঢাকায় নেওয়ার পর আজগরের মৃত্যু হয়। বেঁচে থাকে শুধু আব্দুল্লাহ ইয়ান।
তিনি আরও জানান, ইয়ান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। বেশিরভাগ সময় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে। রাতে ইয়ানের মা ফিডার খাইয়ে বুকে নিয়ে ঘুম পারাতো। এখন সে মাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতেও চায় না। সব সময় শুধু মাকে খুঁজে। মোটরসাইকেলের শব্দ শুনলে পালানোর চেষ্টা করে। ইয়ান বলে সে বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবে। পুলিশ হয়েই যে ট্রেন তার আম্মু আব্বু ও ভাইকে মারছে ওই ট্রেন সে ভেঙে ফেলবে।
ইয়ানের নানা মো. শাহজাহান জানান, ইয়ানকে মানুষের মতো করতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চান। তার মা যেভাবে ইয়ানকে মানুষ করতে চেয়েছিলো সেভাবেই মানুষ করা হবে।
ছবি: ছোট ভাই রাইয়ানের সঙ্গে শিশু ইয়ান