খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: বরিশাল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহণ করছে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট। এসব নৌযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট না থাকার পরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরিশাল ভোলাসহ প্রায় ১০টি রুটে।
তবে এ বিষয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের। যদিও বিআইডব্লিউটিএ বলছে, তারা অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির ধারাবাহিকতায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের উপ-সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদরুল হাসান লিটন এর নেতৃত্বে গত ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে অবৈধ স্পিডবোটের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এ সময় ৫টি অবৈধ নৌযানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবুও থেমে নেই অবৈধ এ স্পিডবোট চলাচল।
অবশ্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বরিশাল নদীবন্দও সংলগ্ন স্পিডবোট ঘাট (ডিসি ঘাট) থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে প্রায় ৫০টি স্পিডবোট ছেড়ে যায়। বিআইডব্লিউটিএর কোনো রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও এসব বোট বরিশাল-ভোলা, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ, পাতারহাটসহ অভ্যন্তরীণ নদীপথের আট থেকে ১০টি রুটে চলাচল করে। পাশাপাশি দক্ষিণের সব রুটে যাত্রী নিয়ে পারাপার করছে। জরুরি প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি স্পিডবোটে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে উত্তাল নদী। এসব বোটে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা হয় না।
অথচ বরিশাল-ভোলা রুটে নিয়মিত ভাড়া আড়াইশ টাকা হলেও সময় সাপেক্ষে তা বাড়িয়ে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা আদায় করছে। সরকারি কোনো তদারকি না থাকায় স্পিডবোট চালক ও মালিকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো রুটটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে যাত্রীদের অভিযোগে জানা গেছে।
বরিশাল স্পিডবোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এ সমিতির আওতায় ২৬টি এবং ভোলা স্পিডবোট সমিতির আওতায় ২৬টি চলাচল করে। তাদের ২৬টির মধ্যে ২০টি রয়েছে অবৈধ স্পিডবোট। কিভাবে এসব অবৈধ স্পিডবোট চালান?
এমন প্রশ্নের জবাবে সমিতির নেতারা জানান, বিষয়টি আপনারাও বোঝেন। সবাইকেই টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কেউ তো চলাচল করতে দেবে না।
বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নৌপথে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নৌপুলিশ গঠন করা হয়েছে। অবৈধ নৌযান বন্ধে তারা পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে যদি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার দরকার হয়, তাহলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর সাহেবেরহাট চ্যানেলের কড়াইতলা খালে দুই স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোলাম সরোয়ার ও তার ভাগ্নে মো. খোকন এবং বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের চর্ম ও যৌন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. প্রদীপ কুমার বণিক আহত হন। ওই বছরই ২৩ ডিসেম্বর রাতেও লাহারহাট চ্যানেলে অবৈধ স্পিডবোট সংঘর্ষে একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ হন।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধ স্পিডবোট চলাচল বিআইডব্লিউটিএ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। বৈধভাবে একটি নৌযানের যাত্রী পরিবহণ করতে হলে সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তর থেকে সার্ভে সনদ ও রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ থেকে রুট পারমিট নিয়ে চলাচল করতে হবে। তাই অবৈধ নৌযান বন্ধের জন্য আমরা চিঠি ইস্যু করেছি।
তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ১৯ অক্টোবর বরিশালে অভিযান পরিচালনা করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়।