ফেনী সমিতি ঢাকার নির্বাচন ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ

রাজধানীতে বসবাসরত ফেনীবাসীদের সংগঠন ‘ফেনী সমিতি, ঢাকা’র কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে আগামী ২৭ নভেম্বর (শনিবার)। সাধারণ সদস্যদের দাবির মুখে নির্বাচনের এ তারিখ ঘোষিত হলেও ভোটগ্রহণ সামনে রেখে নানা অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি সমিতির নেতৃত্বে পুন:দখলের জন্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নানামুখি অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে সমিতির সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ জানিয়েছেন।

ঢাকায় বসবাস করা ফেনীজেলার বাসিন্দাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও কল্যাণের উদ্দেশে ১৯৮৫ সালে ‘ফেনী সমিতি, ঢাকা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্র প্রণয়ণের মাধ্যমে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত ও সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত কমিটির মাধ্যমে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ফেনী জেলার সম্মানিত ও কৃতিব্যক্তিত্বরাই বিভিন্ন সময় সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তোপখানা রোডে ভবন ক্রয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় সমিতির স্থায়ী কার্যালয়। আজীবন সদস্যের সংখ্যা প্রায় দুই হাজারে উন্নীত হয়। সমিতির ফান্ডে যুক্ত হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

সমিতির এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয় একটি স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতায়। সমিতির একাধিক সদস্য জানান, গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা ও নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে পেশিশক্তি প্রয়োগ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে ২০১৫-২০১৭ সালের নির্বাহী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সূচনা হয় কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে সমিতির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আগের জবরদস্তিমূলক পন্থা অনুসরণে বহিরাগতদের দিয়ে অবৈধভাবে সমিতির অফিস দখল করে বিনানির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।

চলতি বছর সদস্যদের দাবির মুখে ঘোষিত হয়েছে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের তফসিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ নভেম্বর (শনিবার) বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফেনী সমিতি ঢাকার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ নির্বাচনে বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি আব্দুল্লাহ-সেলিম পরিষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে গনি-বুলবুল পরিষদ। তবে নির্বাচন কতোটা পক্ষপাতমুক্ত নিরপেক্ষ হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সমিতির সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয়। বর্তমান অনির্বাচিত কমিটির পুনরায় নেতৃত্ব দখলের নানা অপতৎপরতায় এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সমিতির বেশ কজন সদস্য। তাদের অভিযোগ, সমিতির বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি নিজেদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে নেতৃত্ব পুন:দখলের পায়তারা করছেন।

সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন একজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রমে আমরা হতাশ। কারণ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে অনির্বাচিত সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে। তারা কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ভোটার তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুরুতেই কোনো কারণ ছাড়াই ভোটার তালিকার ১১০০ সদস্য ফরম বাতিল বলে ঘোষণা করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন কমিটি। কিন্তু বাতিল করার কারণ এবং বাতিল বাতিলকৃত সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরে ফেনীবাসীর অভিভাবক হিসেবে ফেনী সদর আসনের সম্মানিত সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তার হস্তক্ষেপে  ৪০০ সদস্যকে আপিলের সুযোগ দিলেও বিষয়টির চুড়ান্ত সুরাহা করা হচ্ছে না। অন্যদের বিষয়েও কোনো পরিস্কার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। অথচ বর্তমান অনির্বাচিত কমিটির পছন্দের লোকদের ইচ্ছে মতো ভোটার বানানো হয়েছে। ওইসব নতুন ভোটারের বেশিরভাগেরই ঠিকানা ও ফোন নম্বর ত্রুটিপূর্ণ। এসব কারণে নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে সদস্যদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনাস্থা।

এ পরিস্থিতিতে অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ কমিটির অধীনে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচনের পুন:তফসিল ঘোষণার দাবি তুলেছেন সমিতির সাধারণ সদস্যরা।

Print Friendly

Related Posts