জাতীয় কর্মশালায় চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞগণ
রেটিনোপ্যাথি অফ প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) বা আরওপি-জনিত শিশু অন্ধত্বকে বাংলাদেশের জন্য এক ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন দেশের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীতে আরওপি বিষয়ক একটি জাতীয় কর্মশালায় বক্তৃতাকালে তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৮ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪৩৮,০০০ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। তাদের মতে, অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুদের একটি বড় অংশ আরওপি-জনিত অন্ধত্বের ঝুঁকিতে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজিএমই) মহাপরিচালক ও আইএপিবি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ডিজিএইচএসের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালা বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান ডা. সানজানা ভরদ্বাজ, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ এবং আইআরডি গ্লোবাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. তাপস রায়। এতে আরও যোগ দেন ন্যাশনাল আই কেয়ার/এনআইওএইচ থেকে অধ্যাপক মো. সাইফুল্লাহ এবং ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল থেকে অধ্যাপক নাজমুন নাহার।
বাংলাদেশে আরওপি’র কারণে শৈশব অন্ধত্ব এড়ানোর জন্য একটি সক্রিয় সমন্বয় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার লক্ষে ডিজিএমই, আইআরডি গ্লোবাল, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউনিসেফের সহায়তায় ডিজিএইচএস’র এনএনএইচপি এবং আইএমসিআই প্রোগ্রাম এ কর্মশালার আয়োজন করে।
ডিজিএইচএস মহাপরিচালক তার বক্তৃতায় বলেন, আরওপি অপরিণত শিশুদের একটি গুরুতর সমস্যা। আমরা মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য পরিকল্পনার সংশোধিত সংস্করণে এবং ন্যাশনাল আইকেয়ার প্ল্যানে নিকট ভবিষ্যতে আরওপি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব।
কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং কিছু বাদ দেওয়া যেতে পারে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তিনি নির্দেশিকা প্রণয়নের পরামর্শ দেন। তিনি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের অর্জনে সরাসরি জড়িত থাকার জন্য প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সমিতিকে ধন্যবাদ জানান।
আইএপিবি এবং ডব্লিউএইচওর ২০ বছরের যাত্রার প্রতিফলন করার সময় মূল উপস্থাপক এনায়েত হোসেন বলেন, এটি সময়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিযোগিতা ছিল। আমরা ২০০০ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অফথালমোলোজির পেডিয়াট্রিক অপথালমোলজি বিভাগ চালু করে একটি সংগঠিত পদ্ধতিতে শৈশব অন্ধত্ব নিয়ে কাজ শুরু করি। আমরা দুটি প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ শুরু করেছি – ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং সিস্টেম শক্তিশালীকরণ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০০৩ সালে আমরা একটি প্রোগ্রাম শুরু করি যেখানে আমরা মাঠ পর্যায়ে শৈশব অন্ধত্বে আক্রান্ত শিশুদের শনাক্ত করি এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৫,০০০ শিশুর চোখের অস্ত্রোপচার করি। এ পর্যন্ত আমরা সারা দেশে ২২ টি শিশু চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। যদিও আমরা ডব্লিউএইচও দ্বারা নির্ধারিত ০.৫ মাপকাঠিতে পৌঁছতে পারিনি, দেশে শিশু অন্ধত্ব ২০০৩ সালে ০.৮ থেকে ২০১৭ সালে ০.৬ -এ নেমে এসেছে।
তিনি আরওপি প্রতিরোধে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালীকরণ, অপরিণত অবস্থায় জন্ম রোধ এবং লেবার রুম প্রোটোকল নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. মুনির আহমেদ বলেন, আরওপি অন্ধত্বজনিত এমন একটি রোগ যা সময়মতো স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা করালে প্রতিরোধ করা যায়। শিশুদের জন্মের ২০/৩০ দিনের মধ্যে চোখের স্ক্রিনিং নিশ্চিত করতে হবে। আরওপি প্রতিরোধে আমাদেরকে সংগঠিতভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই কর্মশালার লক্ষ্য আরওপি নির্দেশিকাগুলোর সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দেওয়া।
কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১১০ কোটি মানুষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ছিল, যাদের মধ্যে ৪ কোটি ৩৩ লাখই অন্ধ।
বিশ্বব্যাপী প্রাক্কলন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজনের বিশ্বব্যাপী কোনো না কোনো দৃষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে এবং আরওপি শৈশবকালে সম্মুখীন হওয়া সমস্যার জন্য দায়ী যার চিকিৎসা না করলে অন্ধত্ব সৃষ্টি করতে পারে।
বক্তাদের মতে, চোখের ক্ষতি শুধুমাত্র ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকেই প্রভাবিত করে না বরং বৃহত্তরভাবে সম্প্রদায় এবং দেশকেও প্রভাবিত করে, যার ফলে উৎপাদনশীলতার বৃহত্তর ক্ষতি হয় এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে।