ভোলার ইতিহাসে ২৭ নভেম্বর একটি শোকাবহ দিন। ১২ বছর আগে ২০০৯ সালের এইদিনে রাত ১০টার দিকে ভোলার লালমোহন উপজেলার নাজিরপুর ঘাটে এসে কোকো-৪ লঞ্চ ডুবে ৮১ জন যাত্রী মারা যায়। তারপরের দিনই ছিল কোরবানির ঈদ। মৃতদের অধিকাংশই ছিলো ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফেরা মানুষ। ফলে ভোলাবাসীর এই ঈদ উদযাপন হয়ে ওঠে বিষাদময়।
সেই দুর্ঘটনায় স্বজনহারা মানুষের কান্না এখনো থামেনি। সেদিনের কথা মনে করে আজো আঁতকে ওঠেন অনেকে। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মরণসভা ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
কোকো-৪ দুর্ঘটনায় লালমোহন উপজেলার চর ছকিনা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে নূরে আলম সাগর, তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইয়াসমিন, শ্যালিকা হ্যাপি বেগম মারা যান। নূরে আলম ঈদুল আজহা উপলক্ষে নববধূ ও শ্যালিকাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় তিন জনই প্রাণ হারান। এদের কথা মনে করে এখনো কাঁদেন পরিবারের সদস্যরা। আব্দুর রশিদের পরিবারের মতো সে দুর্ঘটনায় স্বজনহারা অন্যরাও তাদের বাঁধ ভাঙা কান্নাকে চেপে রাখছেন কষ্টে। স্বজন হারানোর শোকে কাতর পরিবারগুলো এখনো বাকরুদ্ধ।
একই এলাকার বাকলাই বাড়ির শামসুন নাহার স্বামী, সন্তান, দেবরসহ বাড়ির ১৬ জনকে নিয়ে কোকো লঞ্চে রওনা হয়েছিলেন ঈদ করতে। বাড়ির কাছের ঘাটে এসেই লঞ্চ ডুবিতে নিহত হয় তার মেয়ে সুরাইয়া (৭), ভাসুরের মেয়ে কবিতা (৩) ও দেবর সোহাগ (১৩)। সেই থেকেই শামসুন নাহার মেয়ের শোকে কাতর। শামসুন নাহারের মতো কোকো-৪ লঞ্চ দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউবা ভাই-বোন আর পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে। সেই মর্মান্তিক ট্রাজেডির কথা মনে করে শোক সাগরে ভাসছে পুরো লালমোহন।
লালমোহন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জসিম জনি বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে শিশু ছিল ৩৬ জন। যদিও বর্তমানে ঢাকা-লালমোহন রুটে একাধিক বিলাসবহুল অত্যাধুনিক লঞ্চ চালু করা হয়েছে। ঘাটগুলোও করা হয়েছে আধুনিকায়ন। দুর্ঘটনায় সে সময় মেরিন আইনে দুটি মামলা দায়েরের কথাও জানান তিনি।