নবীনগরে যে কারণে নৌকার ভরাডুবি

নুরে আলম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চরম বিপর্যয় ঘটেছে।

রোববার (২৮ নভেম্বর) ১২ ইউপির নির্বাচনে ৮টিতেই পরাজিত হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এসব ইউপিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এমনকি স্থানীয় এমপি মো. এবাদুল করিম বুলবুলের নিজ গ্রামেও পরাজিত হয়েছে নৌকা।

বেসরকারি ফলাফলে জানা যায়, এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের নিজ গ্রামে নৌকার প্রার্থী সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল হক সিকদার বিদ্রোহী প্রার্থী সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশিকুর রহমান সোহেলের আনারস প্রতীকের কাছে ১১৪৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদলের নিজ ইউনিয়ন শ্রীরামপুরে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দুজ্জামান ২১৮৯ ভোটে হেরেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাকির উদ্দিনের ঘোড়া প্রতীকের কাছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেকের লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান সওদাগর ১৫০২ ভোট ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ঘোড়া প্রতীকের কাছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী রহমানের নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ফিরোজ মিয়া ৯৯২ ভোট ব্যবধানে হেরেছেন যুবলীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নুর আলমের (নুর আজ্জম) আনারস প্রতীকের কাছে।

অপরদিকে, জিনদপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সাবেক ৩ বারের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফও ৮৪৮ ভোটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী রবি উল্লাহ রবির আনারস প্রতীকের কাছে, রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হাসান শাকিল নৌকা প্রতীকে ৪৬৬ ভোটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভিপি মারুফের আনারস প্রতীকের কাছে, রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আকবর নৌকা প্রতীকে ২৫০৫ ভোটে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি খন্দকার মনির হোসেনের আনারস প্রতীকের কাছে, নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিনের চশমা প্রতীকের কাছে ১৩৪০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।

এসব এলাকায় কেন এ বিপর্যয় তা আওয়ামী লীগের কাছেও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা জানতে চাইছেন, এটা কি প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ত্রুটি, স্থানীয় সংগঠনের দুর্বলতা, না জাতীয় রাজনীতির কোনো প্রভাব। নাকি নেতাদের পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় এ পরাজয়? নাকি মনোনয়ন বাণিজ্য? এ নিয়ে দলের সব পর্যায়েই এখন আলোচনা হচ্ছে।

একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার ভরাডুবির পেছনে এমপি লীগ বা ভাই লীগ, তৃণমূলের মনোনয়ন বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বড় আকারে এই তিন কারণকেই দায়ী করছেন তারা। নৌকার এমন ভরাডুবির পেছনে মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় নেতাদের।

অপরদিকে স্থানীয় সাধারণ মানুষ বলছে ভিন্ন কথা, তারা বলছেন, এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্তভাবে দিনের বেলায় হওয়ায় এবং প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে নৌকার ভড়াডুবি হয়েছে।এতোদিন যার ভোট সে দিতে না পারার কারণও হয়তো! এদিকে স্হানীয় বিএনপি’র মাঝেও চাঙাভাব ফুটে উঠেছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম বলেন, ‘তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই কেন্দ্রে তিনজনের নাম পাঠানো হয়। কেন্দ্র যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাকেই নৌকা দিয়েছে। এখানে পছন্দ-অপছন্দ কিংবা বিনিময়ের প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল ও এলাকা কিংবা বংশগত ভোটের প্রভাব পড়ে। এ ছাড়াও দলীয় বিদ্রোহীদের কারণেও ভোটে প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের সময় এলাকায় এক সপ্তাহ অবস্থান করে এমনটিই দেখেছি।

উল্লেখ্য, নবীনগর উপজেলায় তৃতীয় ধাপে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবার কথা থাকলেও বড়িকান্দি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী লুৎফর রহমান লাল মিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়নি।

Print Friendly

Related Posts