জন্মদিনের সভায় বক্তারা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাষা সংগ্রামী কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর ৭৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে হবিগঞ্জ মানিক চৌধুরী পাঠাগারের নির্মিত অস্থায়ী প্রতিকৃতি বেদি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল।
সোমবার দিনব্যাপী সমাজের সকলস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে মানিক চৌধুরীর স্মৃতির স্মরণে। এসময় উপস্থিত সকলের কন্ঠে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হয় একজন ভালো মানুষ হিসাবে।
তার জন্মদিন উপলক্ষে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মানিক চৌধুরী পাঠাগারের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এরমধ্যে ছিল জেলা শহরের শায়েস্তানগরে কবর জিয়ারত ও শীতবস্ত্র বিতরণ। বিকালে মানিক চৌধুরী পাঠাগারে আলোচনা সভা।
পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকরামুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে এ সভায় নেতৃবৃন্দরা বক্তৃতা করেন।
সভায় হবিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর (মানিক চৌধুরী) যে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সেই স্মৃতি স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পরেন সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ বাবুল চৌধুরী।
বক্তব্যে তিনি বলেন- মানিক ভাই না থাকলে হয়ত আমার মত টগবগ তরুণের পক্ষে যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হতো না। তিনি আমাদেরকে সাহস যুগিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে রণযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে। আমরা জাতির তরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলাম।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসাবে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সুখ্যাতি ছিল দেশের সর্বমহলে। মানিক ভাই একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাছাড়া, তিনি ঘাই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে ছিলেন ১৯৭৩-৭৪ সালে। সে কারণে, বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মানিক চৌধুরীকে সম্মানিত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক-৭৪ প্রদান করে। আমি বিশ্বাস করি, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সাহসী ভূমিকাকে সকল সময়ের সাংবাদিকবৃন্দ মনে রাখবে শ্রদ্ধার সাথে।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা- বাবু অনুপ কুমার দেব মনা বলেন, আমরা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে হবিগঞ্জ শহরে জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত করেছি। চুঙ্গা দিয়ে দলের আর্দশের কথা রাজনৈতিক কর্মীদের শুনাতে দেখেছি। তাকে কখনো ক্ষমতাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে দেখিনি। মানিক চৌধুরীর জীবনের শেষে দিকে- ফটোস্ট্যাট মেশিন চালিয়ে সংসার চালাতে দেখেছি।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, আমরা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীকে শ্রদ্ধা করি, কারণ তিনি চা-শ্রমিকদেরকে সম্মান দিতে জানতেন। মানিক চৌধুরীর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের চা- বাগানে তীরন্দাজ বাহিনী গঠিত হয় ও প্রতিরোধ যুদ্ধে চা শ্রমিকরা সাহসের সাথে অংশ নেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজি গোলাম মর্তুজা বলেন, মানিক চৌধুরী হবিগঞ্জ মহকুমার এসডিও আকবর আলী খানকে ২৭ মার্চ ১৯৭১ পিস্তল দেখিয়ে বলেন জাতির এই দুর্দিনে আপনি অস্ত্র দিবেন কি-না বলেন। তারপর মানিক ভাই নিজেই সরকারী খাতায় স্বাক্ষর করে অস্ত্র বের করেন। আকবর আলী বাধ্য হন খুলে দিতে। একাত্তরের ২৭ মার্চে এমন সাহসীকতা- উপস্থিত থাকা আর কোন নেতাই দেখাতে সেদিন পারেননি। মানিক ভাইয়ের নেতৃত্বে- লুন্ঠিত সরকারী অস্ত্র দিয়ে সিলেটের শেরপুর-সাদিপুরে প্রথম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালিত হয়। আর ব্যংকের লুন্ঠিত অর্থ দিয়ে ভারতের ক্যাম্পগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাপড় ও জুতা কেনা হয়েছিল। যা জেনারেল ওসমানী নিজে তার বক্তব্যে বলে গেছেন। আমরা সেদিন উপস্থিত থেকে শুনেছি। এসব ইতিহাস হবিগঞ্জের নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে।
বেগম রোকেয়া চৌধুরী বলেন, মানিক চৌধুরী স্মৃতি স্মরণে এই পাঠাগার। এটা দানকৃত সম্পত্তি। এখানে সবসময় ভালো কাজ হবে।ভালো মানুষ গড়ার কাজে তরুণদের অনুপ্রেরণার শক্তি হবে- এই পাঠাগার। কেয়া, আমাদের কনিষ্ঠ সন্তান হয়েও অনেক বড় কাজে নিজেকে নিবেদিত করেছে। নিরবে পিছন থেকে কাজ করছে। আমি যদি বেঁচে না-ও থাকি, আপনারা পাশে থেকে এই মহতী কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে কেয়াকে সাহায্য করবেন। এই আবেদন টুকুই, আজ এ-মহতী অনুষ্ঠানে রেখে গেলাম।
মানিক চৌধুরী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, একজন ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসাবে আমি আমার কাজ এগিয়ে নিবো ইনশাআল্লাহ। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করি।